সৌর বিকিরণ

 সৌর বিকিরণ(SOLAR RADIATION)

সাধারণভাবে বলা যায় সূর্য থেকে আগত তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গকে সৌর বিকিরণ বলে |সৌর বিকিরণকে ধরা যেতে পারে ও বিভিন্ন প্রযুক্তিবিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন শক্তির রূপে যেমন তাপ এবং বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা যায় । কোনো স্থানে  প্রযুক্তি গত কৌশল লাভজনক হবে কিনা তা নির্ভর করে ওই স্থানে সৌর শক্তির প্রাপ্যতার উপর । 

তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ ( বিকিরণ) 

তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ এক প্রকারের শক্তি যা আমাদের চতুর্দিকে অবস্থান করছে .। এগুলি হল রেডিও তরঙ্গ , মাইক্রো ওয়েভ , এক্স রশ্মি , গামা রশ্মি .। সূর্যালোক হল তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালির বিশাল বিস্তারের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র .। 

তরঙ্গ ও ক্ষেত্র ঃ 

সনাতন পদার্থ বিদ্যার নিয়ম আনুসারে যখন কোনো আধান যুক্ত কণিকা ত্বরিত গতিতে থাকে তখন তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ উতপন্ন হয় .। এর ফলে পরস্পর লম্বভাবে কম্পনশীল তড়িৎ ক্ষেত্র ও চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয় যা কম্পনের অভিমুখের সঙ্গে লম্বভাবে গতিসিল হয় .। এই তরঙ্গ ফোটন নামেও পরিচিত |শূন্য স্থানে ফোটন সেকেন্ডে প্রায় 3 00000 কিমি বা 186000 মাইল বেগে গতিশীল থাকে .। এই তরঙ্গের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আছে যেমন কম্পাঙ্ক , তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ও শক্তি | 

 


দুটি পরপর তরঙ্গ উঁচুর মধ্যবর্তী দূরত্বকে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে .।  একক সময়ে যত গুলি তরঙ্গ উতপন্ন হয় তাকে কম্পাঙ্ক বলে | কম্পাঙ্কের একক সাইকেল পার সেকেন্ড বা  হার্জ , তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এর একক মিটার .। ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এর বিকরনের কম্পাঙ্ক বেশি হয় । কারণ একটি সাইকেল অতিক্রম করতে কম সময় দরকার হয় । অনুরূপ ভাবে দীর্ঘ তরঙ্গের ক্ষেত্রে কম্পাঙ্ক কম হয় ,কারণ একটি সাইকেল সম্পূর্ণ করতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় । 

তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালী ( The EM spectrum) :

তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের বিস্তার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ও কম্পাঙ্কের একটি বিশাল পাল্লা জুড়ে অবস্থান করছে ।  কম্পাঙ্কের বা তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এর এই পাল্লাকে তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালী । ক্রমবর্ধমান শক্তি বা কম্পঙ্ক বা ক্রমহ্রাসমান তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অনুসারে গোটা তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালীকে সাধারনত সাত টি  অঞ্চলে বিভক্ত করা যায় । এই সাতটি অঞ্চলের নাম গুলি হল - বেতার তরঙ্গ , ক্ষুদ্র তরঙ্গ ( micro wave ), অবলহিত তরঙ্গ ,  দিশ্যমান আলো , অতি বেগুলি রশ্মি , এক্স রশ্মি এবং গামা রশ্মি । সাধারনত কম শক্তির বিকিরন যেমন বেতার তরঙ্গকে কম্পাঙ্ক হিসাবে প্রকাশ করা হয় ; ক্ষুদ্র তরঙ্গ , অবলহিত তরঙ্গ , দিশ্যমান আলো এবং অতিবেগুনি রশ্মিকে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এ প্রকাশ করা হয় । বেশি শক্তির বিকিরন যেমন এক্স রশ্মি এবং গামারশ্মি কে ফোটন প্রতি শক্তি আকারে লেখা হয় । 

 




দিশ্য মান আলো ঃ

তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালীর মধ্য স্থানে দিশ্যমান আলোর অবস্থান ,অবলহিত এবং অতিবেগুনি রশ্মির মাঝে । দিশ্যমান আলের কম্পাঙ্কের পাল্লা হল 400 THz থেকে 800 THz ( 1 THz = 10^12 Hz ) এবং তরঙ্গ দৈর্ঘ্যর পাল্ল হল 740 nm থেকে 380 nm ( 1 nm = 10^-9 m)  যে পাল্লার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যর আলো মানব চক্ষুতে ধরা পড়ে তাকে তাকে দিশ্যমান আলো বলে ।  

মূলনীতি ঃ 

এই পৃথিবীর প্রতিটি স্থান বছরের কোনো না কোনো সময় সূর্যের আলতে আলোকিত হয় । কোনো স্থান কি পরিমাণ সূর্যালোক পায় তা নিম্নের বিষয় গুলির উপর নির্ভর করে । 

ভোঁ গলিক অবস্থান 

দিনের সময় 

ঋতু 

স্থানীয় ভুমির রূপ 

স্থানীয় জলবায়ু  

পৃথিবী গোলাকার হওয়ার দরুন সূর্য রশ্মি বিভিন্ন কোণে আপতিত হয় । এই কোণের পরিমান 0 ডিগ্রি(প্রায় অনুভুমিক ) থেকে 90 ডিগ্রি(উলম্ব) পর্যন্ত হয় ।যখন সূর্য আলোক উলম্ব ভাবে পড়ে তখন পৃথিবী পৃষ্ঠ সম্ভাব্য সব শক্তি পায় ।আর যখন  রশ্মি কাত করে পড়ে তখন রশ্মি বায়ু মণ্ডলের মধ্যে বেশি দূরত্ব আতিক্রম করে ফলে সূর্য রশ্মি বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় । পৃথিবী গোলাকার হওয়ার জন্য বরফ আবৃত মেরু অঞ্চল কখনোই বেশি সূর্য আলোক পায় না ,এবং পৃথিবীর অক্ষ সামান্য কাত করে থাকার জন্য  মেরু অঞ্চল বছরের খানিকটা সময় মোটেই আলো পায় না । 

পৃথিবী সূর্যের চারদিকে উপবৃত্ত কার পথে ঘুরছে এবং বছরের কিছু সময় সূর্য পৃথিবীর  অনেকটা কাছে আসে । যখন সূর্য পৃথিবীর নিকটবর্তী হয় তখন পৃথিবী পৃষ্ঠ অধিক সৌর শক্তি পায় । পৃথিবী সূর্যের কাছাকাছি হয় যখন দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্ম কাল ও উত্তর গোলার্ধে শীতকাল । যদিও বিশাল সাগরের উপস্তিতি তাপমাত্রার পার্থক্যকে কমিয়ে দেয় । পৃথিবীর কো নো স্থান কি পরিমান সূর্যালোক পাবে তা অনেকটাই নির্ভর করে পৃথিবীর 23.5 degree হেলানো অক্ষের উপর । এই হেলানো অক্ষের জন্য বসন্তকাল থেকে সরত কাল পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধে দিন দীর্ঘতর হয় ।একই কারনে দক্ষিণ গোলার্ধে পরবর্তী ৬ মাস দিন বড় হয় । মার্চের ২৩ এবং সেপ্টেম্বর এর ২২ তারিখে নিরক্ষীয় অঞ্চলে দিন রাত্রি সমান সমান হয়, ১২ ঘণ্টা করে । 

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এর মত দেশ যেগুলি মধ্য অক্ষাংশে অবস্থিত তারা গ্রীষ্ম কালে অধিক সূর্য আলোক পায় কারণ ওই সময় দিন দীর্ঘ তর হয় এবং সূর্য প্রায় মাথার উপরে অবস্থান করে । শীত কালের মাসগুলিতে সূর্য রশ্মি অধিক তির্যক ভাবে পড়ে । দেনেভার ও কলোরাডোর( ৪০ ডিগ্রী অক্ষাংশ)  মত সহরগুলি ডিসেম্বর মাস অপেক্ষা জুন মাসে প্রয় তিন গুন বেশি সূর্যরশ্মি পায় । 

পৃথিবীর ঘূর্ণনের জন্যও দিনের বিভিন্ন সময়ে সূর্যরশ্মির পরিমানের কম বেশি হয় । খুব সকালে এবং বিকালে সূর্য অনুজ্জ্বল হয়ে যায় , রশ্মিগুলি দুপুর অপেক্ষা অধিক দূরত্ব অতিক্রম করে পৃথিবী পৃষ্ঠে আসে । একটি সৌর দিনে সৌর শক্তি সংগ্রাহক দুপুর বেলায় সবচেয়ে বেশি সূর্যালোক পায় । 

বিক্ষিপ্ত এবং প্রত্যক্ষ সৌর বিকিরণ ঃ

যখন সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে তখন নিম্নলিখিত উপাদানের দ্বারা শোষিত , বিক্ষিপ্ত এবং প্রতিফলিত হয় । 

বায়ুর অণু 

জলীয় বাস্প 

মেঘ 

ধূলিকণা 

দূষক পদার্থ 

দাবানল 

আগ্নেয় গিরি থেকে অগ্ন্যূৎপাত 

এই ধরনের বিকিরিন কে বিক্ষিপ্ত সৌর বিকিরন বলে । আর যে সূর্যের আলো সরাসরি পৃথিবী পৃষ্ঠে পৌছায় তাকে প্রত্যক্ষ সৌর বিকিরন বলে । প্রত্যক্ষ ও বিক্ষিপ্ত এই দুই প্রকার বিকিরণকে একত্রে পার্থিব সৌর  বিকিরন বলে । পরিষ্কার আকাশে বায়ুমণ্ডলের অবস্থা প্রত্যক্ষ বিকিরণকে প্রায় ১০ % কমিয়ে দেয় ,কিন্তু মেঘলা দিনে প্রত্যক্ষ বিকিরন প্রায় ১০০ % কমে যায় । 

 পরিমাপ :

বিজ্ঞানীরা বছরের বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট কতকগুলি স্থানে সূর্য আলোকের পরিমান নির্ণয় করে । এরপর বিজ্ঞানিরা একই অক্ষাংশে অনুরূপ জলবায়ু র সর্তে কতটা সৌর শক্তি পাবে তা তারা হিসাব করেন । একটি অনুভুমিক পৃষ্ট মোট যে পরিমান সৌর শক্তি পায় তা দ্বারাই সৌর বিকিরনের পরিমাপ করা হয় ।

সৌর বিকিরণ সংস্থাতে সৌরশক্তিকে কিলোওয়াট-ঘণ্টা প্রতি বর্গ ুওাত(kwh/m² )  এককে মাপা হয় । সৌর শক্তির প্রত্যক্ষ পরিমাপ কে ওয়াট প্রতি বর্গ মিটার(W/m²) এককেও প্রকাশ করা হয় ।

সৌর তাপন সিস্টেম এ সৌর শক্তিকে ব্রিটিশ থার্মাল একক প্রতি বর্গ ফুট ( Btu /ft²) এককে লেখা হয় ।

পুনঃ নবীকরণ যোগ্য শক্তি 

পুনঃ নবীকরণ যোগ্য শক্তি কাকে বলে ? 

যে সকল শক্তি আমরা সরাসরি প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাই যেমন সৌর শক্তি , বায়ু , বৃষ্টি , জোয়ার ভাটা এবং ভূগর্ভ স্থ তাপ শক্তি কে পুনঃ নবীকরণ যোগ্য শক্তি বলে । এই শক্তিগুলির সরবরাহ সীমিত নয় , এগুলিকে বার বার ব্যবহার করা যেতে পারে । এগুলি অপুনঃ নবীকরণ যোগ্য শক্তি যেমন কয়লা ,খনিজতেল  ও প্রাকৃতিক গ্যাসগুলির তুলনায়  কখনই শেষ হবে না । বেশির ভাগ পুনঃ নবীকরণ যোগ্য শক্তি আমরা সূর্য থেকে পাই । সৌর শক্তি আমরা সূর্যের তাপ এবং আলোক শক্তি থেকে পাই । এটা মনে রাখার মত যে সূর্য  আবহাওয়াও নিয়ন্ত্রন করে । বিভিন্ন প্রকার পুনঃ নবীকরণ যোগ্য শক্তিগুলি হল - 

সৌর শক্তি

বায়ু শক্তি 

জৈব শক্তি 

ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প 

ভুতাপ শক্তি 

জোওয়ার ভাটার শক্তি 

কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের পরোক্ষ উৎস হল সূর্য । 

 


সংক্ষেপে অন্তর্নিহিত পদ্ধতিগুলি ঃ

প্রতিটি পুনঃ নবী করণ শক্তি তৈরি কোনো না কোনো প্রাকৃতিক পদ্ধতির দ্বারা । এই পদ্ধতিগুল নীচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল ।

সৌর বিকিরণ :

সূর্য যে সকল শক্তি প্রদান করছে তার উৎস এর অভ্যন্তরে নিহিত । সূর্যের অভ্যন্তেরে হাইড্রোজেন পরমাণু গুলি সংযুক্ত হয়ে হিলিয়াম পরমাণুতে পরিণত হয় ।এর ফলে প্রতি সেকেন্ডে 3.86 x 10^26 জুল পরিমান শক্তি নির্গত হয় । তাপন প্রক্রিয়া ও শুষ্ক করণের জন্য সৌর শক্তি বহুকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । বর্তমানে এই শক্তি ঘর বাহির আলোকিত করতে ,বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনে ও জল গরমের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে । যত বেশি সৌরশক্তি পৃথিবী পায় তত বেশি ই প্রয়োজন ।

বায়ু শক্তি :

পৃথিবী পৃষ্ঠ বিভিন্ন হারে সৌর শক্তি শোষণ করে । পৃথিবী পৃষ্ঠের এক স্থান অপর স্থান আপেক্ষা বেশি গরম হয় । এর ফলে বাতসের প্রাবাহ হয় এবং বায়ু শক্তি উতপন্ন হয় । এই বায়ু শক্তি প্রায় হাজার বছর যাবত ব্যবহৃত হয়ে আসছে । পুরাকালে বায়ু শক্তির দ্বারা পালতোলা জাহাজ চালাত । বায়ু চালিত যন্ত্রের সাহায্যে জল তোলা হতো । বর্তমানে আমরা বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি ।

বাইওমাস ঃ

এটি হোল প্রাকৃতিক সার যা উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সময় সূর্যালোক উদ্ভিরা শোষণ করে । এই সৌর শক্তির কিছু অংশ সবুজ উদ্ভিদের মধ্যে আবদ্ধ থাকে । এই প্রকারের শক্তিকে বলে বাইওমাস বলে । এই শক্তিকে তাপ , বিদ্যুৎ এমনকি জ্বালানি উৎপাদনের কাজেও  ব্যবহার করা যেতে পারে ।

ক্ষুদ্র জল বিদ্যুৎ প্রকল্প ঃ

এটি সংরক্ষিত জল থেকে উৎপাদিত একটি দূষণ হীন বিদ্যুৎশক্তি । বায়ু প্রবাহের মত পৃথিবী স্বাভাবিক ভাবে জলপ্রবাহের সৃষ্টি করে । এগুলি সাধারনত খাল, নদী ও জল প্রবাত আকারে আমরা পাই । অতীত কালে জল শক্তির সাহায্যে ময়দা তৈরির যন্ত্র চালানো হত । আধুনিক টারবাইন যন্ত্রের দ্বারা জল প্রবাহের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উতপন্ন করা হচ্ছে ।

ভূগর্ভস্থ তাপ শক্তি ঃ

পৃথিবীর অভ্যন্তর ভূপৃষ্ঠ অপেক্ষা অনেক বেশি গরম । অর্থাৎ পৃথিবীর ভিতরে অনেক বেশি তাপ শক্তি আবদ্ধ আছে এবং কিছু পদার্থ পৃথিবীর অভ্যন্তরে ক্ষয়ীভুত হয়ে শক্তি প্রদান করে । এই প্রকারের শক্তি অভ্যন্তর থেকে বের করে তাপ এবং বিদ্যুৎ শক্তি উতপাদনে কাজে লাগানো যেতে পারে । 

জোয়ার ভাটার শক্তি ঃ

এই শক্তি পাওয়া যায় পৃথিবী , সূর্য ও চন্দ্রের আপেক্ষিক গতির জন্য । সূর্য , পৃথিবী এবং চন্দ্রের মধ্যে মহাকর্ষীয় বল ক্রিয়া করে । এই মহাকর্ষীয় বলই জোয়ার ভাটার জন্য দায়ী । প্রতি সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে দিনে দু বার জোয়ার ও দু বার ভাঁটা হয় । এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা যেতে পারে । বর্তমানে এই শক্তির ব্যবহার অনেক কম । 

তরঙ্গ শক্তি ঃ

পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রায় ৭০ শতাংশ জল । সমুদ্র তরঙ্গের মধ্যে অনেক শক্তি লুকিয়ে থাকে । এই শক্তিকে তরঙ্গ শক্তি বলে । প্রযুক্তি বিদ্যার সাহায্যে এই তরঙ্গ শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রুপান্তরিত করা যায় । এই প্রাকারের শক্তির ব্যবহারও অনেক কম । 

প্রযুক্তি গত কৌশল 

 
   
পুনঃ নবীকরণ যোগ্য শক্তি 

পুনঃ নবীকরণ যোগ্য শক্তি কাকে বলে ? 

যে সকল শক্তি আমরা সরাসরি প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাই যেমন সৌর শক্তি , বায়ু , বৃষ্টি , জোয়ার ভাটা এবং ভূগর্ভ স্থ তাপ শক্তি কে পুনঃ নবীকরণ যোগ্য শক্তি বলে । এই শক্তিগুলির সরবরাহ সীমিত নয় , এগুলিকে বার বার ব্যবহার করা যেতে পারে । এগুলি অপুনঃ নবীকরণ যোগ্য শক্তি যেমন কয়লা ,খনিজতেল  ও প্রাকৃতিক গ্যাসগুলির তুলনায়  কখনই শেষ হবে না । বেশির ভাগ পুনঃ নবীকরণ যোগ্য শক্তি আমরা সূর্য থেকে পাই । সৌর শক্তি আমরা সূর্যের তাপ এবং আলোক শক্তি থেকে পাই । এটা মনে রাখার মত যে সূর্য  আবহাওয়াও নিয়ন্ত্রন করে । বিভিন্ন প্রকার পুনঃ নবীকরণ যোগ্য শক্তিগুলি হল - 

সৌর শক্তি

বায়ু শক্তি 

জৈব শক্তি 

ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প 

ভুতাপ শক্তি 

জোওয়ার ভাটার শক্তি 

কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের পরোক্ষ উৎস হল সূর্য । 

 


সংক্ষেপে অন্তর্নিহিত পদ্ধতিগুলি ঃ

প্রতিটি পুনঃ নবী করণ শক্তি তৈরি কোনো না কোনো প্রাকৃতিক পদ্ধতির দ্বারা । এই পদ্ধতিগুল নীচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল ।

সৌর বিকিরণ :

সূর্য যে সকল শক্তি প্রদান করছে তার উৎস এর অভ্যন্তরে নিহিত । সূর্যের অভ্যন্তেরে হাইড্রোজেন পরমাণু গুলি সংযুক্ত হয়ে হিলিয়াম পরমাণুতে পরিণত হয় ।এর ফলে প্রতি সেকেন্ডে 3.86 x 10^26 জুল পরিমান শক্তি নির্গত হয় । তাপন প্রক্রিয়া ও শুষ্ক করণের জন্য সৌর শক্তি বহুকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । বর্তমানে এই শক্তি ঘর বাহির আলোকিত করতে ,বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনে ও জল গরমের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে । যত বেশি সৌরশক্তি পৃথিবী পায় তত বেশি ই প্রয়োজন ।

বায়ু শক্তি :

পৃথিবী পৃষ্ঠ বিভিন্ন হারে সৌর শক্তি শোষণ করে । পৃথিবী পৃষ্ঠের এক স্থান অপর স্থান আপেক্ষা বেশি গরম হয় । এর ফলে বাতসের প্রাবাহ হয় এবং বায়ু শক্তি উতপন্ন হয় । এই বায়ু শক্তি প্রায় হাজার বছর যাবত ব্যবহৃত হয়ে আসছে । পুরাকালে বায়ু শক্তির দ্বারা পালতোলা জাহাজ চালাত । বায়ু চালিত যন্ত্রের সাহায্যে জল তোলা হতো । বর্তমানে আমরা বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি ।

বাইওমাস ঃ

এটি হোল প্রাকৃতিক সার যা উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সময় সূর্যালোক উদ্ভিরা শোষণ করে । এই সৌর শক্তির কিছু অংশ সবুজ উদ্ভিদের মধ্যে আবদ্ধ থাকে । এই প্রকারের শক্তিকে বলে বাইওমাস বলে । এই শক্তিকে তাপ , বিদ্যুৎ এমনকি জ্বালানি উৎপাদনের কাজেও  ব্যবহার করা যেতে পারে ।

ক্ষুদ্র জল বিদ্যুৎ প্রকল্প ঃ

এটি সংরক্ষিত জল থেকে উৎপাদিত একটি দূষণ হীন বিদ্যুৎশক্তি । বায়ু প্রবাহের মত পৃথিবী স্বাভাবিক ভাবে জলপ্রবাহের সৃষ্টি করে । এগুলি সাধারনত খাল, নদী ও জল প্রবাত আকারে আমরা পাই । অতীত কালে জল শক্তির সাহায্যে ময়দা তৈরির যন্ত্র চালানো হত । আধুনিক টারবাইন যন্ত্রের দ্বারা জল প্রবাহের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উতপন্ন করা হচ্ছে ।

ভূগর্ভস্থ তাপ শক্তি ঃ

পৃথিবীর অভ্যন্তর ভূপৃষ্ঠ অপেক্ষা অনেক বেশি গরম । অর্থাৎ পৃথিবীর ভিতরে অনেক বেশি তাপ শক্তি আবদ্ধ আছে এবং কিছু পদার্থ পৃথিবীর অভ্যন্তরে ক্ষয়ীভুত হয়ে শক্তি প্রদান করে । এই প্রকারের শক্তি অভ্যন্তর থেকে বের করে তাপ এবং বিদ্যুৎ শক্তি উতপাদনে কাজে লাগানো যেতে পারে । 

জোয়ার ভাটার শক্তি ঃ

এই শক্তি পাওয়া যায় পৃথিবী , সূর্য ও চন্দ্রের আপেক্ষিক গতির জন্য । সূর্য , পৃথিবী এবং চন্দ্রের মধ্যে মহাকর্ষীয় বল ক্রিয়া করে । এই মহাকর্ষীয় বলই জোয়ার ভাটার জন্য দায়ী । প্রতি সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে দিনে দু বার জোয়ার ও দু বার ভাঁটা হয় । এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা যেতে পারে । বর্তমানে এই শক্তির ব্যবহার অনেক কম । 

তরঙ্গ শক্তি ঃ

পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রায় ৭০ শতাংশ জল । সমুদ্র তরঙ্গের মধ্যে অনেক শক্তি লুকিয়ে থাকে । এই শক্তিকে তরঙ্গ শক্তি বলে । প্রযুক্তি বিদ্যার সাহায্যে এই তরঙ্গ শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রুপান্তরিত করা যায় । এই প্রাকারের শক্তির ব্যবহারও অনেক কম । 

প্রযুক্তি গত কৌশল 

 
   
 

 

1 টি মন্তব্য:

  1. বজ্রপোধর্থগুলি কে পুনঃ নবিকরণ করে তুলতে তোমার গ্রহণ যোগ্য মতামত প্রদর্শন করো

    উত্তরমুছুন

MCQ for H.S

 1. A chemical cell of emf  E and internal resistance r is connected to a resistance R .The potential difference across R is given by :  A) ...