: নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র :
এই মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুকণা পরস্পরকে উহাদের সংযোজক সরলরেখা দ্বারা আকর্ষণ করছে । এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু দুটির ভরের গুণফলের সমানুপাতিক ও উহাদের মধ্য দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক ।
F ∝ m₁m₂/r²
F হল বস্তু কণা দুটির মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বল , m₁ ও m₂ হল বস্তুকণা দুটির ভর এবং r হলো বস্তুদুটির মধ্য দূরত্ব । সমীকরণ হিসাবে উপরের সূত্র কে নিন্নলিখিত ভাবে লেখা যায় ।
F = G m₁m₂/r² , G কে বলা হয় সার্বজনীন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক । G এর মান পরীক্ষামূলক ভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর মান হল
G = 6.67 x 10⁻¹¹ N m² kg⁻²
মহাকর্ষ সূত্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট :
1. মহাকর্ষ সূত্রটি হল ক্রিয়া -প্রতিক্রিয়া যুগ্ম ।প্রথম বস্তুটি দ্বিতীয় বস্তুটির উপর উভয়ের সংযোজক বরাবর একটি বল প্রয়োগ করে ,আবার দ্বিতীয় বস্তুটি প্রথম বস্তুর একই সরলরেখা বরাবর সমান ও বিপরীত মুখী বল প্রয়োগ করে ।
2. সার্বজনীন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক G ও অভিকর্ষজ ত্বরণ g এক জিনিস নয় । G একটি স্কেলার রাশি ,এর মাত্রা হল M⁻¹ L³ T⁻² এবং এর একক হল N m²kg⁻² | অপর পক্ষে g একটি ভেক্টর রাশি ,এর মাত্রা LT⁻² এবং একক m s⁻²
3. G কে সার্বজনীন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলে ,কারণ G মান যে কোনো দুটি বস্তুর ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক ভাবে নির্ণয় করা হয় এবং ওই মান অন্য বস্তুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । এর মান মাধ্যম নিরপেক্ষ , বস্তুর উপাদানের ওপর নির্ভর করে না শুধু ভরের উপর নির্ভরশীল ।
অভিকর্ষজ ত্বরণ :
পৃথিবীকে একটি বিচ্ছিন্ন ভর হিসাবে গণ্য করলে ,এর নিকটস্থ যেকোনো বস্তু একটি বল অনুভব করে । এই বল সর্বদা পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে ক্রিয়া করে এবং একে mg আকারে লেখা হয় । যেখানে m বস্তুর ভর , g অভিকর্ষজ ত্বরণ ।
F = mg = GmM/R² , M পৃথিবীর ভর , R পৃথিবীর ব্যাসার্ধ ।
∴ g = GM/R²
পৃথিবীর নিকটস্থ সকল বস্তু একই ত্বরণে পড়ে , এই ত্বরণ সর্বদা পৃথিবীর কেন্দ্রের অভিমুখে কাজ করে ।
মহাকর্ষীয় স্থিতি শক্তি :
m ভরের একটি বস্তু পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে h দূরত্বে অবস্থান করলে উহার স্থিতিশক্তি হবে ,
PE = - GmM/(R +h) = - GmM/r
যেখানে r = R + h , কেন্দ্র থেকে বস্তুর দূরত্ব । স্থিতিশক্তি সর্বদা ঋনাত্বক হয় , শূন্য স্থিতিশক্তির অর্থ হল বস্তুদ্বয় পরস্পর অসীম দূরত্বে অবস্থিত ।
পৃথিবীপৃষ্ঠের কাছাকাছি বস্তুর ক্ষেত্রে h << R স্থিতিশক্তিকে m g h রূপে লেখা হয় , কারণ এক্ষেত্রে g ধ্রুবক হয় এবং পৃথিবীপৃষ্ঠে স্থিতিশক্তি শূন্য হয় ।
মহাকর্ষীয় বিভব ( Gravitational Potential ) :
কোনো মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে কোনো বিন্দুতে অসীম দূরত্ব থেকে একক ভরের বস্তুকে আনতে যে কার্য সম্পাদিত হয় তাকে ওই বিন্দুর মহাকর্ষীয় বিভব বলে ।
পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে h দূরত্বে কোনো বিন্দুতে মহাকর্ষীয় বিভব হয় ,
V = - GM/(R + h) = - GM/r
ঋনাত্বক চিহ্ন থেকে বোঝা যায় যে দূরবর্তী বিন্দুর বিভব নিকট বিন্দুর বিভব থেকে বেশি হয় ।
কোনো বস্তুতে সর্বনিম্ন যে বেগ আরোপ করলে বস্তুটি পৃথিবীর আকর্ষণ ছাড়িয়ে চলে যায় ,আর পৃথিবীতে ফিরে আসে না সেই বেগকে মুক্তি বেগ বলে ।ইহার মান হল -
vₑ = √ (2MG/R) , M = পৃথিবীর ভর , R = পৃথিবীর ব্যাসার্ধ
যে হেতু g = GM/R² অতএব মুক্তিবেগকে নীচের সমীকরণে লেখা যায়
যে হেতু g = GM/R² অতএব মুক্তিবেগকে নীচের সমীকরণে লেখা যায়
vₑ = √ ( 2gR)
উপরের সমীকরণে M , G, R এর মান বসলে মুক্তিবেগের মান পাওয়া যায়
11.2 km s⁻¹
উপগ্রহ ( Setellite) :
একটি বস্তু যখন আর একটি ভারী বস্তুর চারদিকে ঘুরতে থাকে তাকে সেই ঘূর্ণায়মান বস্তুটিকে উপগ্রহ বলে ।
একটি বস্তু যখন আর একটি ভারী বস্তুর চারদিকে ঘুরতে থাকে তাকে সেই ঘূর্ণায়মান বস্তুটিকে উপগ্রহ বলে ।
কৃত্তিম উপগ্রহকে কয়েকশত কিলোমিটার রকেটের সাহায্যে উপরে নিয়ে গিয়ে একটি অনুভূমিক বেগ দিয়ে পৃথিবীর চারদিকে ঘোরানো হয় । যে গতিবেগে উপগ্রহ ঘুরতে থাকে তাকে কক্ষীয় বেগ(Orbital velocity) বলে ।
ধরাযাক উপগ্রহটির কক্ষীয় বেগ vₒ , এর ভর m এবং পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে উপগ্রহের দূরত্ব r
অপকেন্দ্র বল = mvₒ²/r , এই অপকেন্দ্র বল উপগ্রহ ও পৃথিবীর মধ্যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলের সমান ও বিপরীতমুখী হয় ।মহাকর্ষীয় বলের পরিমান GmM/r²
অতএব mvₒ²/r = GmM/r² , M = পৃথিবীর ভর
⇒ vₒ = √ ( GM/r )
= √ [ GM/(R + h)] ,h = পৃথিবীপৃষ্ট থেকে উপগ্রহের উচ্চতা , R = পৃথিবীর ব্যাসার্ধ
আবার আমরা জানি g = GM/R² ⇒ GM = g R²
এতএব কক্ষীয় বেগের রাশিমালাটি হবে ,
vₒ = √ [ gR²/(R + h)]
= π
যদি R >>h তাহলে
vₒ = √(gR)
সুতরাং পৃথিবীর নিকটস্থ কোনো কৃত্রিম উপগ্রহের বেগ উচ্চতা নিরেপেক্ষ এবং ইহার মান
vₒ = √(gR) = √ ( 9.8 x 6.4 x 10⁶} = 7.9 x 10³ m/s = 8 km /s
পর্যায় কাল (Periodic Time) :
কোনো কৃত্রিম উপগ্রহ এক পাক ঘুরে আসতে যে সময় লাগে তাকে পর্যায় কাল বলে । পর্যায় কাল T হলে ,
T = 2 π r / vₑ
= 2 π ( R + h )/ √ [ gR²/(R + h)]
⇒ T = 2 π√ [( R + h)³ /g R²]
ভূসমলয় উপগ্রহ ( Geostationary satellite) :
যে কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর সাপেক্ষে স্থির বলে মনে হয় তাকে ভূসমলয় উপগ্রহ বলে । এই উপগ্রহের ক্ষেত্রে পর্যায় কাল পৃথিবীর নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণন পর্যায় কালের সমান হয় । এই শর্ত সিদ্ধ হবে যখন উপগ্রহটি ভূপৃষ্ঠ থেকে 36000 km উচ্চতায় স্থাপন করা হয় ।
যে কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর সাপেক্ষে স্থির বলে মনে হয় তাকে ভূসমলয় উপগ্রহ বলে । এই উপগ্রহের ক্ষেত্রে পর্যায় কাল পৃথিবীর নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণন পর্যায় কালের সমান হয় । এই শর্ত সিদ্ধ হবে যখন উপগ্রহটি ভূপৃষ্ঠ থেকে 36000 km উচ্চতায় স্থাপন করা হয় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন