তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া ( Electricity and Chemical Reaction):
তড়িৎ বিশ্লেষ্য (Electrolytes) :
যে সকল পদার্থ গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে রাসায়নিক পরিবর্তণ সাধিত হয়ে নুতন পদার্থ উৎপন্ন হয় তাদের তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে । সাধারণত আয়োনীয় যৌগ গুলি তড়িৎ বিশ্লেষ্য হয় ।
যে সকল পদার্থ গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে রাসায়নিক পরিবর্তণ সাধিত হয়ে নুতন পদার্থ উৎপন্ন হয় তাদের তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে । সাধারণত আয়োনীয় যৌগ গুলি তড়িৎ বিশ্লেষ্য হয় ।
যেমন - লবণ (Salts) [ সোডিয়াম ক্লোরাইড ,ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ইত্যাদি ]
এসিড (Acids ) - হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ,সালফিউরিক অ্যাসিড ,নাইট্রিক অ্যাসিড ইত্যাদি ।
ক্ষার ( Bases) - সোডিয়াম হাইড্রো অক্সাইড ,পটাসিয়াম হাইড্রো অক্সাইড ইত্যাদি ।
তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ ( Non Electrolytes) :
যে সব পদার্থ গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না তাদের তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে । যেমন - চিনি ,পেট্রোল, এলকোহল ইত্যাদি । সাধারণত সমযোজী যৌগ গুলি গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় কোনো আয়ন উৎপন্ন করে না , তাই এগুলি তড়িৎ অবিশ্লেষ্য হয় ।
তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য ( Strong Electrolytes) :
যে সব তড়িৎ বিশ্লেষ্য লঘু জলীয় দ্রবণে বেশি মাত্রায় বিয়োজিত হয়ে অধিক সংখ্যক আয়ন উৎপন্ন করে তাদের তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য বলে । যেমন - সোডিয়াম ক্লোরাইড ( NaCl ) ,কস্টিক পটাশ (KOH ) ইত্যাদি ।
মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য ( Weak Electrolytes ) :
যে সমস্ত তড়িৎ বিশ্লেষ্য লঘু জলীয় দ্রবণে আয়োনিত হয়ে কম সংখ্যায় আয়ন উৎপন্ন করে তাদের মৃদৃ তড়িৎ বলে । যেমন - এমোনিয়াম হাইড্রো অক্সাইড ( NH₄OH), কার্বনিক এসিড ( H₂CO₃) ইত্যাদি ।
তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে তড়িৎ পরিবহনের কৌশল :

আয়ন : তড়িৎ গ্রস্ত পরমাণু বা পরমাণু পুঞ্জকে আয়ন বলে ।
ক্যাটায়ন : ধনাত্মক তড়িৎগ্রস্ত পরমাণু বা পরমাণু পুঞ্জ্যকে ক্যাটায়ন বলে ।
আনায়ন : ঋণাত্মক তড়িৎ গ্রস্ত পরমাণু বা পারমাণুপুঞ্জকে আনায়ন বলে ।
তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ জলে বা গলিত অবস্থায় ক্যাটায়ন ও আনায়ন এ পরিণত হয় । এই আয়ন গুলির দ্বারা তড়িৎ পরিবাহিত হয় । গলিত বা দ্রবীভূত তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে দুটি ধাতব পাত নিমজ্জিত করে পাত দুটিকে ব্যাটারির যথাক্রমে পজিটিভ ও নেগেটিভ মেরুর সঙ্গে যোগ করলে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ টির মধ্যে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হবে । ক্যাটায়নগুলি ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার ক্যাথোডের দিকে গমন করে ।আনায়ন গুলি ধনাত্মক তড়িৎদ্বার এনোড এর দিকে যায় । যে পাতটি ধনাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত থাকে তাকে এনোড বলে ।আর যে ধাতব পাতটি ঋণাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত থাকে তাকে ক্যাথোড বলে ।NaCl এর তড়িৎ বিশ্লেষণে Na⁺ আয়ন গুলি ক্যাথোডে যায় এবং Cl⁻ আয়ন গুলি এনোডে গমণ করে । ক্যাথোডে রাসায়নিক বিক্রিয়াটি হল -
Na⁺ + e ⟶ Na , এটি একটি বিজারণ বিক্রিয়া , কারণ ইলেকট্রন গ্রহণকে বিজারণ বলে ।
এনোড এর রাসায়নিক বিক্রিয়াটি হল নিম্নরূপ ।
Cl⁻ - e ⟶ Cl , এটি জারণ বিক্রিয়া , কারণ ইলেকট্রন বর্জনকে জারণ বলে ।
তড়িৎ বিশ্লেষণ (Electrolysis) :
যে পদ্ধতিতে গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের বিদ্যুৎ চালনা করে পদার্থটির বিয়োজন ঘটিয়ে নূতন পদার্থ উৎপন্ন করে সেই পদ্ধতিকে তড়িৎ বিশ্লেষণ বলে ।
ভোল্টামিটার :
যে পাত্রে গলিত বা জলে দ্রবীভূত তড়িৎ বিশ্লেষ্য রেখে তড়িৎ বিশ্লেষণ করা হয় তাকে ভোল্টামিটার বলে ।
জলের তড়িৎ বিশ্লেষণ :

বিশুদ্ধ জলে H⁺ ও OH ⁻ আয়নের সংখ্যা অনেক কম থাকে , তাই আয়নের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিশুদ্ধ জলে সামান্য পরিমানে কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ ( এসিড ,ক্ষার ,লবন ) যোগ করা হয় ।
বিশুদ্ধ জলে সামান্য পরিমানে এসিড মিশিয়ে প্ল্যাটিনাম তড়িৎ দ্বারের মাধ্যমে তড়িৎ চালনা করলে এনোডে অক্সিজেন ও ক্যাথোডে হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয় । হাইড্রোজেন গ্যাসের আয়তন অক্সিজেন গ্যাসের আয়তনের দ্বিগুণ হয় ।
H₂O ⟶ H⁺ + OH⁻
ক্যাথোডে বিক্রিয়া : 4H⁺ +4e ⟶ 2H₂
এনোড বিক্রিয়া : 4OH ⟶ 2H₂O + O₂
হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের আয়তনের অনুপাতে 2∶ 1
কপার তড়িত্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎ বিশ্লেষণ :

কপার সালফেট জলীয় দ্রবণে নিম্নলিখিত ভাবে বিয়োজিত হয় ।
CuSO₄ ⇄ Cu⁺² + SO₄⁻²
H₂O ⇄ H⁺ + OH⁻
কপার এনোড ও কার্বণ ক্যাথোড ব্যবহার করে তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে ক্যাথোডে একই সঙ্গে Cu⁺² ও H⁺ গমণ করে । কিন্তূ Cu⁺² আয়ন H⁺ অপেক্ষা কম ধনাত্মক তড়িৎ ধর্মী । সেইজন্য কপার আয়ন ক্যাথোডে আগে মুক্ত হয় ।ক্যাথোড ক্রমশ পুরু হয় । অন্যদিকে এনোডে একই সঙ্গে SO₄⁻² ও OH⁻ গমন করে ।কিন্তূ SO₄⁻² ও OH⁻ আয়নের ত্যাগের প্রবণতার তুলনায় কপার পরমাণুর ইলেকট্রন ত্যাগের প্রবণতা বেশি । তাই এনোড এর কপার পরমাণু দুটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে কপার আয়ন এ (Cu⁺²) পরিণত হয়ে দ্রবণে আসে । ফলে এনোড এর কপার ক্রমশ ক্ষয় হয় ।
ক্যাথোড বিক্রিয়া : Cu⁺² +2e⟶ Cu
এনোড বিক্রিয়া : Cu ⟶ Cu ⁺² +2e
দ্রবণে শেষ পর্যন্ত্য কপার আয়ন (Cu⁺²) ও সালফেট আয়ন ( SO₄⁻²) থেকে যায় ।
তড়িৎ বিশ্লেষণের প্রয়োগ :
1)তড়িৎ লেপন (Electroplating):
তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতির সাহায্যে অপেক্ষাকৃত বেশি সক্রিয় ধাতব বস্তুর(লোহা ,তামা পিতল ইত্যাদি ) উপর অপেক্ষাকৃত কম সক্রিয় ধাতুর ( রুপা ,সোনা ,প্ল্যাটিনাম ইত্যাদি ) প্রলেপ দেওয়ার পদ্ধতিকে তড়িৎলেপন বলে ।

উদ্দেশ্য :
ধাতব বস্তুকে জলবায়ুর প্রকোপ থেকে রক্ষা করার জন্য বা সুদৃশ্য করার জন্য বা স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য তাড়িত লেপন করা হয় ।এই প্রক্রিয়ায় যে দ্রব্যের উপর প্রলেপ দিতে হবে তাকে ক্যাথোড রূপে ব্যবহার করতে হবে । যে ধাতুর প্রলেপ দিতে হবে এনোড হিসাবে জন্য ব্যবহার করতে হবে । আর যে ধাতুর প্রলেপ দিতে হবে সেই ধাতুর একটি লাবনকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য ব্যবহার করতে হবে ।
রুপার প্রলেপ : স্টিল বা লোহার চামচের উপর রুপার প্রলেপ দেওয়ার জন্য চামচটিকে ক্যাথোড হিসাবে ,রুপার একটি দণ্ড এনোড হিসাবে এবং রুপার একটি লবন যেমন AgNO₃ এর দ্রবণ তড়িৎ বিশ্লেষ্য ব্যবহার করা হয় । AgNO₃ ⇌ Ag⁺ + NO₃⁻
এনোডে বিক্রিয়া - Ag - e ⟶ Ag⁺ ক্যাথোডে বিক্রিয়া - Ag⁺ +e ⟶ Ag
নিকেলের প্রলেপ :
লোহার দ্রব্যের উপর নিকেলের প্রলেপ দেওয়ার জন্য লোহার দ্রব্যকে ক্যাথোড হিসাবে , নিকেলের পাতকে এনোড রূপে এবং নিকেলের লবণ নিকেল সালফেট (NiSO₄)এর জলীয় দ্রবণকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য ব্যবহার করা হয় ।

NiSO₄ ⇌ Ni⁺² + SO₄⁺²
ক্যাথোডে বিক্রিয়া - Ni⁺² +2e ⟶ Ni
এনোডে বিক্রিয়া - Ni -2e ⟶ Ni⁺²
2)ধাতু নিষ্কাশন :
এটি আর একটি তড়িৎ বিশ্লেষণের প্রয়োগ । তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক ধাতুগুলিকে( সোডিয়াম ,পটাসিয়াম ,ক্যালশিয়াম ,এলোমিনিয়াম প্রভৃতি ) তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিষ্কাশন করা হয় । এই ধাতুগুলির ক্লোরাইড ,অক্সাইড বা হাইড্রোঅক্সাইডকে তাপ বিগলিত করে তড়িৎ বিশ্লেষ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় । যেমন এলুমিনার (Al₂O₃) তড়িৎ বিশ্লেষণ করে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশন করা হয় । 20% এলুমিনার সঙ্গে 60% ক্রিয়োলাইট ( AlF₃,3NaF )
ও 20% ফ্লুওস্পার (CaF₂) মিশিয়ে 900⁰ C তাপমাত্রায় গরম করলে মিশ্রণটি গলে যায় । এরপর গ্রাফাইট তড়িৎ দ্বারের সাহায্যে তড়িৎ পাঠালে ক্যাথোডে অ্যালুমিনিয়াম উৎপন্ন হয় ।
Al₂O₃ ⇌ 2Al⁺³ + 3O⁻²
ক্যাথোডে বিক্রিয়া - Al⁺³ + 3e ⟶ Al
এনোডে বিক্রিয়া - 3O⁻² - 6e ⟶ 3O ; 3O +3O ⟶ 3O₂

এসিড (Acids ) - হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ,সালফিউরিক অ্যাসিড ,নাইট্রিক অ্যাসিড ইত্যাদি ।
ক্ষার ( Bases) - সোডিয়াম হাইড্রো অক্সাইড ,পটাসিয়াম হাইড্রো অক্সাইড ইত্যাদি ।
তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ ( Non Electrolytes) :
যে সব পদার্থ গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না তাদের তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে । যেমন - চিনি ,পেট্রোল, এলকোহল ইত্যাদি । সাধারণত সমযোজী যৌগ গুলি গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় কোনো আয়ন উৎপন্ন করে না , তাই এগুলি তড়িৎ অবিশ্লেষ্য হয় ।
তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য ( Strong Electrolytes) :
যে সব তড়িৎ বিশ্লেষ্য লঘু জলীয় দ্রবণে বেশি মাত্রায় বিয়োজিত হয়ে অধিক সংখ্যক আয়ন উৎপন্ন করে তাদের তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য বলে । যেমন - সোডিয়াম ক্লোরাইড ( NaCl ) ,কস্টিক পটাশ (KOH ) ইত্যাদি ।
মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য ( Weak Electrolytes ) :
যে সমস্ত তড়িৎ বিশ্লেষ্য লঘু জলীয় দ্রবণে আয়োনিত হয়ে কম সংখ্যায় আয়ন উৎপন্ন করে তাদের মৃদৃ তড়িৎ বলে । যেমন - এমোনিয়াম হাইড্রো অক্সাইড ( NH₄OH), কার্বনিক এসিড ( H₂CO₃) ইত্যাদি ।
তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে তড়িৎ পরিবহনের কৌশল :
আয়ন : তড়িৎ গ্রস্ত পরমাণু বা পরমাণু পুঞ্জকে আয়ন বলে ।
ক্যাটায়ন : ধনাত্মক তড়িৎগ্রস্ত পরমাণু বা পরমাণু পুঞ্জ্যকে ক্যাটায়ন বলে ।
আনায়ন : ঋণাত্মক তড়িৎ গ্রস্ত পরমাণু বা পারমাণুপুঞ্জকে আনায়ন বলে ।
তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ জলে বা গলিত অবস্থায় ক্যাটায়ন ও আনায়ন এ পরিণত হয় । এই আয়ন গুলির দ্বারা তড়িৎ পরিবাহিত হয় । গলিত বা দ্রবীভূত তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে দুটি ধাতব পাত নিমজ্জিত করে পাত দুটিকে ব্যাটারির যথাক্রমে পজিটিভ ও নেগেটিভ মেরুর সঙ্গে যোগ করলে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ টির মধ্যে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হবে । ক্যাটায়নগুলি ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার ক্যাথোডের দিকে গমন করে ।আনায়ন গুলি ধনাত্মক তড়িৎদ্বার এনোড এর দিকে যায় । যে পাতটি ধনাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত থাকে তাকে এনোড বলে ।আর যে ধাতব পাতটি ঋণাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত থাকে তাকে ক্যাথোড বলে ।NaCl এর তড়িৎ বিশ্লেষণে Na⁺ আয়ন গুলি ক্যাথোডে যায় এবং Cl⁻ আয়ন গুলি এনোডে গমণ করে । ক্যাথোডে রাসায়নিক বিক্রিয়াটি হল -
Na⁺ + e ⟶ Na , এটি একটি বিজারণ বিক্রিয়া , কারণ ইলেকট্রন গ্রহণকে বিজারণ বলে ।
এনোড এর রাসায়নিক বিক্রিয়াটি হল নিম্নরূপ ।
Cl⁻ - e ⟶ Cl , এটি জারণ বিক্রিয়া , কারণ ইলেকট্রন বর্জনকে জারণ বলে ।
তড়িৎ বিশ্লেষণ (Electrolysis) :
যে পদ্ধতিতে গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের বিদ্যুৎ চালনা করে পদার্থটির বিয়োজন ঘটিয়ে নূতন পদার্থ উৎপন্ন করে সেই পদ্ধতিকে তড়িৎ বিশ্লেষণ বলে ।
ভোল্টামিটার :
যে পাত্রে গলিত বা জলে দ্রবীভূত তড়িৎ বিশ্লেষ্য রেখে তড়িৎ বিশ্লেষণ করা হয় তাকে ভোল্টামিটার বলে ।
জলের তড়িৎ বিশ্লেষণ :

বিশুদ্ধ জলে H⁺ ও OH ⁻ আয়নের সংখ্যা অনেক কম থাকে , তাই আয়নের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিশুদ্ধ জলে সামান্য পরিমানে কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ ( এসিড ,ক্ষার ,লবন ) যোগ করা হয় ।
বিশুদ্ধ জলে সামান্য পরিমানে এসিড মিশিয়ে প্ল্যাটিনাম তড়িৎ দ্বারের মাধ্যমে তড়িৎ চালনা করলে এনোডে অক্সিজেন ও ক্যাথোডে হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয় । হাইড্রোজেন গ্যাসের আয়তন অক্সিজেন গ্যাসের আয়তনের দ্বিগুণ হয় ।
H₂O ⟶ H⁺ + OH⁻
ক্যাথোডে বিক্রিয়া : 4H⁺ +4e ⟶ 2H₂
এনোড বিক্রিয়া : 4OH ⟶ 2H₂O + O₂
হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের আয়তনের অনুপাতে 2∶ 1
কপার তড়িত্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎ বিশ্লেষণ :
কপার সালফেট জলীয় দ্রবণে নিম্নলিখিত ভাবে বিয়োজিত হয় ।
CuSO₄ ⇄ Cu⁺² + SO₄⁻²
H₂O ⇄ H⁺ + OH⁻
কপার এনোড ও কার্বণ ক্যাথোড ব্যবহার করে তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে ক্যাথোডে একই সঙ্গে Cu⁺² ও H⁺ গমণ করে । কিন্তূ Cu⁺² আয়ন H⁺ অপেক্ষা কম ধনাত্মক তড়িৎ ধর্মী । সেইজন্য কপার আয়ন ক্যাথোডে আগে মুক্ত হয় ।ক্যাথোড ক্রমশ পুরু হয় । অন্যদিকে এনোডে একই সঙ্গে SO₄⁻² ও OH⁻ গমন করে ।কিন্তূ SO₄⁻² ও OH⁻ আয়নের ত্যাগের প্রবণতার তুলনায় কপার পরমাণুর ইলেকট্রন ত্যাগের প্রবণতা বেশি । তাই এনোড এর কপার পরমাণু দুটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে কপার আয়ন এ (Cu⁺²) পরিণত হয়ে দ্রবণে আসে । ফলে এনোড এর কপার ক্রমশ ক্ষয় হয় ।
ক্যাথোড বিক্রিয়া : Cu⁺² +2e⟶ Cu
এনোড বিক্রিয়া : Cu ⟶ Cu ⁺² +2e
দ্রবণে শেষ পর্যন্ত্য কপার আয়ন (Cu⁺²) ও সালফেট আয়ন ( SO₄⁻²) থেকে যায় ।
তড়িৎ বিশ্লেষণের প্রয়োগ :
1)তড়িৎ লেপন (Electroplating):
তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতির সাহায্যে অপেক্ষাকৃত বেশি সক্রিয় ধাতব বস্তুর(লোহা ,তামা পিতল ইত্যাদি ) উপর অপেক্ষাকৃত কম সক্রিয় ধাতুর ( রুপা ,সোনা ,প্ল্যাটিনাম ইত্যাদি ) প্রলেপ দেওয়ার পদ্ধতিকে তড়িৎলেপন বলে ।

উদ্দেশ্য :
ধাতব বস্তুকে জলবায়ুর প্রকোপ থেকে রক্ষা করার জন্য বা সুদৃশ্য করার জন্য বা স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য তাড়িত লেপন করা হয় ।এই প্রক্রিয়ায় যে দ্রব্যের উপর প্রলেপ দিতে হবে তাকে ক্যাথোড রূপে ব্যবহার করতে হবে । যে ধাতুর প্রলেপ দিতে হবে এনোড হিসাবে জন্য ব্যবহার করতে হবে । আর যে ধাতুর প্রলেপ দিতে হবে সেই ধাতুর একটি লাবনকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য ব্যবহার করতে হবে ।
রুপার প্রলেপ : স্টিল বা লোহার চামচের উপর রুপার প্রলেপ দেওয়ার জন্য চামচটিকে ক্যাথোড হিসাবে ,রুপার একটি দণ্ড এনোড হিসাবে এবং রুপার একটি লবন যেমন AgNO₃ এর দ্রবণ তড়িৎ বিশ্লেষ্য ব্যবহার করা হয় । AgNO₃ ⇌ Ag⁺ + NO₃⁻
এনোডে বিক্রিয়া - Ag - e ⟶ Ag⁺ ক্যাথোডে বিক্রিয়া - Ag⁺ +e ⟶ Ag
নিকেলের প্রলেপ :
লোহার দ্রব্যের উপর নিকেলের প্রলেপ দেওয়ার জন্য লোহার দ্রব্যকে ক্যাথোড হিসাবে , নিকেলের পাতকে এনোড রূপে এবং নিকেলের লবণ নিকেল সালফেট (NiSO₄)এর জলীয় দ্রবণকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য ব্যবহার করা হয় ।

NiSO₄ ⇌ Ni⁺² + SO₄⁺²
ক্যাথোডে বিক্রিয়া - Ni⁺² +2e ⟶ Ni
এনোডে বিক্রিয়া - Ni -2e ⟶ Ni⁺²
2)ধাতু নিষ্কাশন :
এটি আর একটি তড়িৎ বিশ্লেষণের প্রয়োগ । তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক ধাতুগুলিকে( সোডিয়াম ,পটাসিয়াম ,ক্যালশিয়াম ,এলোমিনিয়াম প্রভৃতি ) তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিষ্কাশন করা হয় । এই ধাতুগুলির ক্লোরাইড ,অক্সাইড বা হাইড্রোঅক্সাইডকে তাপ বিগলিত করে তড়িৎ বিশ্লেষ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় । যেমন এলুমিনার (Al₂O₃) তড়িৎ বিশ্লেষণ করে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশন করা হয় । 20% এলুমিনার সঙ্গে 60% ক্রিয়োলাইট ( AlF₃,3NaF )
ও 20% ফ্লুওস্পার (CaF₂) মিশিয়ে 900⁰ C তাপমাত্রায় গরম করলে মিশ্রণটি গলে যায় । এরপর গ্রাফাইট তড়িৎ দ্বারের সাহায্যে তড়িৎ পাঠালে ক্যাথোডে অ্যালুমিনিয়াম উৎপন্ন হয় ।
Al₂O₃ ⇌ 2Al⁺³ + 3O⁻²
ক্যাথোডে বিক্রিয়া - Al⁺³ + 3e ⟶ Al
এনোডে বিক্রিয়া - 3O⁻² - 6e ⟶ 3O ; 3O +3O ⟶ 3O₂

অনুশীলনী
বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ )[ https://forms.gle/GRBUUnMv742Gz67U6 ]
1. জলীয় দ্রবণে একটি মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য হল
A) H₂SO₄ B) NaCl C) CH₃COOH D) NaOH
2. তড়িৎ বিশ্লেষণ পাত্র হল
A) ভোল্টামিটার B) হাইগ্রোমিটার C) ক্যালরিমিটার D) নিউক্লিয়ার রেয়াক্টর
3.জলের তড়িৎ বিশ্লেষণে তড়িৎদ্বার হিসাবে ব্যবহৃত হয়
A) প্ল্যাটিনাম পাত B) কপার পাত C) গ্রাফাইট পাত D) সিলভার পাত
4. লোহার দ্রব্যে কপারের প্রলেপ করতে তড়িৎ বিশ্লেষ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়
A) NaCl এর জলীয় দ্রবণ B) CuSO₄ এর জলীয় দ্রবণ C) AgNO₃ এর জলীয় দ্রবণ D) BaCl₂ এর জলীয় দ্রবণ
5.তড়িৎ বিশ্লেষণে তড়িৎ শক্তি রূপান্তরিত হয়
A) শব্দ শক্তি B) তাপশক্তি C) চুম্বক শক্তি D) রাসায়নিক শক্তি
6.নীচের কোনটির তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা সর্বাধিক ?
A) বিশুদ্ধ জলের B) চিনির জলীয় দ্রবন C) তরল হাইড্রোজেন ক্লোরাইড D) এসিটিক এসিডের জলীয় দ্রবণ
7. তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় ক্যাথোডে কোন প্রক্রিয়া ঘটে ?
A) জারণ B) বিজারণ C) উভয়েই D) কোনোটাই নয়
8.এসিড মিশ্রিত জলের তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় ক্যাথোডে ও এনোডে উৎপন্ন গ্যাসের অনুপাত
A) 1։ 2 B) 2 ∶ 1 C) 1፡ 1 D) 2∶ 3
9.কোনটি তড়িৎ এর কুপরিবাহী ?
A) HCl দ্রবণ B) KCl দ্রবণ C) গলিত কস্টিক সোডা D) বিশুদ্ধ জল
10.কোনটি তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ ?
A) HCl B) চিনি C) NaCl D) NaOH
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন