ধাতুবিদ্যা (Metallurgy)

                                                            ধাতুবিদ্যা 
বর্তমান যুগে ধাতু ছাড়া কোনো শিল্প বা  নির্মাণ কাজ সম্ভব নয় । বেশির ভাগ ধাতুগুলি বিভিন্ন যৌগ আকারে প্রকৃতিতে  বর্তমান ।উপযুক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ধাতুগুলিকে এই যৌগ গুলি থেকে নিষ্কাশন করা হয় ।
কয়েকটি ধাতুর ব্যবহার :
আয়রন বা লোহার ব্যবহার  - বিভিন্ন কাজে  তিন প্রকারের লোহা ব্যবহৃত হয় - ঢালাই লোহা বা কাস্ট আয়রণ ,পেটা লোহা বা রট আয়রণ  ও ইস্পাত বা স্টিল ।
কাস্ট আয়রণ - পাইপ ,রেলিং ,কড়াই ,ইস্ত্রি ও আলোক স্তম্ভ ইত্যাদি  তৈরিতে  ব্যবহার  হয় ।
রট আয়রণ - পেরেক।,নাটবল্টু ,রড  শেকল  ও তার  ইত্যাদি তৈরিতে  কাজে  লাগে ।
স্টিল - রেলের বগি ,ইঞ্জিন ,রেল লাইন , মোটর গাড়ি ,স্প্রিং,অস্ত্র প্রচারের যন্ত্রপাতি ,ছুরি  কাঁচি  ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।
কপার বা তামার ব্যবহার - উচ্চ তড়িৎ পারিবাহিতার জন্য  বৈদ্যুতিক তার , টেলিফোনের তার ,মোটর ,ডায়নামো  এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় । রান্নার বাসনপত্র ,ক্যালরিমিটার ,মুদ্রা ,অক্ষর ও মূর্তি ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।
জিংক বা দস্তার ব্যবহার - তড়িৎ কোষ  ও নির্জল ব্যাটারি প্রস্তুতে ব্যবহৃত হয় ।লোহার জিনিসের  ওপর  জিংক এর প্রলেপ দিতে ,ধাতব সোনা  ও রূপা নিষ্কাসনে ,পরীক্ষাগারে  হাইড্রোজেন প্রস্তুতিতে  এবং  বিজারক রূপে কাজে  লাগে । জিঙ্ক হোয়াইট নামক সাদা রঙ প্রস্তুতিতে  ও ছাপার ব্লক  প্রস্তুতিতে  ব্যবহৃত হয় ।
এলুমিনিয়ামের ব্যবহার - হালকা ধাতু  বলে  বিমান বা মোটর গাড়ির  কাঠামো তৈরিতে ,জানালার ফ্রেম  তৈরিতে কাজে লাগে ।তাপের সুপারিবাহী বলে  রান্নার বাসনপত্র ,বৈদ্যুতিক সুপারিবাহিতার কারণে  বিদ্যুতিক তার  তৈরিতে কাজে লাগে ।থারমিট পদ্ধতিতে রেল লাইন জোড়া লাগাতে এলুমিনিয়ামের ব্যবহার হয় ।পাতলা পাতে পরিণত করা যায় বলে প্যাকিং ফয়েল  প্রস্তুতিতে এলুমিনিয়ামের ব্যবহার হয় ।
ধাতুসঙ্কর বা সংকর ধাতু :
দুই  বা ততোধিক ধাতুর সমসত্ত্ব বা অসমসত্ব  মিশ্রনে উৎপন্ন কঠিন দ্রাবনকে  সংকর ধাতু  বলে ।
ধাতুর কাঠিন্য ,নমনীয়তা বৃদ্ধি ,জলবায়ুর হাত থেকে রক্ষা করা ,জারণ ক্রিয়া  হ্রাস ,তাপ ও তড়িৎ পরিবাহিতা  কমানো বা বাড়ানোর জন্য সংকর ধাতু তৈরি করা হয় ।
        কয়েকটি  সংকর ধাতু ও তাদের ব্যবহার 
 ধাতু  সংকর ধাতু  উপাদান ও সংযুক্তি  ব্যবহার 
 Fe  কলঙ্কহীন  বা  স্টেইনলেস স্টিল  Fe -73 %,Cr - 18%,Ni - 8%,সামান্য কার্বন  থাকে বাসনপত্র ,ছুরি ,কাঁটা চামচ ,অস্ত্রপ্রচারের যন্ত্রপাতি প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয় ।
 Fe ইনভার Fe- 64%, Ni - 36%,সামান্য কার্বন থাকে মিটার স্কেল ,ঘড়ির পেন্ডুলাম ,পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি  তৈরিতে কাজে লাগে ।
 Fe  ম্যাঙ্গানিজ স্টিল  Fe - 85%, Mn - 36%,সামান্য কার্বন থাকে  রেল লাইন ,হেলমেট  ও পাথর চূর্ণ করার মেশিন প্রস্তুত করতে 
 Cu ,Zn পিতল বা ব্রাস  Cu - 60- 80% ,Zn - 20 - 40% বাসনপত্র ,কল ,ফুলদানি ও  বিভিন্ন ভাস্কর্য্যের কাজ 
 Cu ,Zn ব্রোঞ্জ  Cu - 80%, Zn - 2%,Sn - 18% মুদ্রা ,মেডেল  ,মূর্তি ,অলংকার  ইত্যাদি 
 Cu ,Zn জার্মান সিলভার  Cu - 50%, Zn - 20% ,Ni - 30%- বাসনপত্র ,ফুলদানি ,অলংকার ও নানারকম সৌখিন দ্রব্য প্রস্তুতিতে 
  Cu ,Zn গানমেটাল  Cu -87%, Sn - 10%,Zn - 2%,Pb - 1% বন্দুক ,ভালভ ,যন্ত্রপাতি 
  Cu ,Zn কাঁসা বা বেল মেটাল  Cu -80%,Sn - 20% বাসনপত্র ,ঘন্টা ,মূর্তি ইত্যাদি 
 Al ডুরালুমিন  Al - 95$,Cu - 4%, Mn -0.5%,Mg  0.5% বিমানের কাঠামো ,মোটর গাড়ির  বিভিন্ন অংশ 
 Al মাগনেলিয়াম  Al  - 90 - 95% ,Mg - 5-10 % বিমানের যন্ত্রাংশ ,বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি 

আমালগাম : ধাতু শঙ্করের একটি উপাদান পারদ হলে তাকে আমালগাম বা পারদ সংকর বলে ।
ব্যবহার - দাঁতের চিকিৎসায় (Ag/ Hg),আয়না তৈরিতে (Sn/Hg) ব্যবহৃত হয় ।
আকরিক ও খনিজ :
খনিজ - ভূগর্ভে বা  ভূত্বকে প্রাপ্ত প্রকৃতি জাত অজৈব পদার্থ যাদের মধ্যে  এক বা একাধিক ধাতু প্রধানত যৌগ রূপে  অন্যান্য অশুদ্ধির সঙ্গে মিশ্রিত থাকে  তাদের সংশ্লিষ্ট ধাতুর খনিজ বলে ।
আকরিক  - যে সমস্ত খনিজ থেকে সহজে ও লাভজনক উপায়ে উচ্চ মানের ধাতু নিষ্কাশন করা  যায়  তাকে আকরিক বলে । যেমন  - বক্সাইট (Al₂O₃ 2H₂O),চাইনা ক্লে (Al₂O₃ 2SiO₂,2H₂O) হলো Al এর  খনিজ । কিন্তূ বক্সাইট হল Al এর আকরিক কারণ বক্সাইট  থেকে সহজে লাভ জনক ভাবে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশন করা যায় ।কিন্তু চাইনা ক্লে এলুমিনিয়ামের আকরিক নয় ।
          খনিজ ও আকরিকের মধ্যে পার্থক্য 
 খনিজ  আকরিক 
1. ভূপৃষ্ট বা খনি থেকে প্রকৃতিজাত কঠিনাকার ধাতব যৌগগুলি  হল খনিজ । 1.যে সমস্ত খনিজ থেকে সহজে এবং সুলভে ধাতু নিষ্কাশন করা যায় সেগুলিকে বলে আকরিক ।
2. সমস্ত খনিজ আকরিক নয় । 3.সমস্ত আকরিক ই  হল খনিজ ।

                               কয়েকটি ধাতুর আকরিকের নাম ও সংকেত 
 ধাতু  আকরিকের নাম ও সংকেত 
 আয়রন  রেড হেমাটাইট (Fe₂O₃),ম্যাগনেটাইট (Fe₃O₄),স্প্যাথিক আয়রন (FeCO₃)
 কপার  কপার  (CuFeS₂),কপার গ্লান্স (Cu₂S),মালাকাইট (CuCO₃.Cu(OH)₂),কিউপ্রাইট (Cu₂O )
 জিংক  জিংক ব্লেন্ড (ZnS ),ক্যালামাইন (ZnCO₃),জিঙ্ক কাইট (ZnO )
 অ্যালুমিনিয়াম  বক্সাইট (Al₂O₃ 2H₂O),গিবসাইট (Al₂O₃ .3H₂O),ক্রায়োলাইট (AlF₃.3NaF)

ধাতুবিদ্যা প্রসঙ্গে  জারণ - বিজারণ :
জারণ - যে প্রক্রিয়ায় কোনো পরমাণু  বা  আয়ন এক বা একাধিক ইলেকট্রন বর্জন করে তাকে জারণ বলে ।
যে পরমাণু বা আয়ন ইলেকট্রন বর্জন করে সেই পরমাণু বা আয়ন জারিত হয় ।
পরমাণু থেকে ইলেকট্রন বর্জনে জারণ - Na - e → Na⁺, Ca - 2e → Ca²⁺ , Al - 3e → Al³⁺ 
ক্যাটায়ান থেকে ইলেকট্রন বর্জনে জারণ  - Cu⁺ - e →Cu²⁺, Fe²⁺ - e → Fe³⁺ 
আনায়ন থেকে ইলেকট্রন বর্জনে জারণ  - S²⁻ - 2e → S , 2Cl⁻ - 2e → Cl₂ 
বিজারণ - যে প্রক্রিয়ায়  কোনো পরমাণু  বা আয়ন  এক বা  একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাকে বিজারণ বলে । পরমাণু  বা আয়ন ইলেকট্রন গ্রহনের ফলে বিজারিত হয় ।
পরমাণু দ্বারা ইলেকট্রন গ্রহণে বিজারণ - Cl + e → Cl⁻ , Br + e → Br⁺ , O +2e →O²⁻
ক্যাটায়ান দ্বারা ইলেকট্রন গ্রহণে বিজারণ - Na⁺ + e →Na, Mg²⁺ + 2e → Mg 
জারক ও বিজারক পদার্থ :
যে পদার্থ ইলেকট্রন গ্রহণ করে অন্যকে জারিত করে নিজে বিজারিত হয় তাকে জারক পদার্থ বলে ।
যেমন -উপরের বিক্রিয়াতে Cl,Br,  Na⁺ জারক দ্রব্য ।
যে পদার্থ ইলেকট্রন বর্জন করে অপরকে বিজারিত করে নিজে জারিত হয় তাকে বিজারক পদার্থ বলে ।
যেমন - Na ,  Cu⁺,Ca বিজারক দ্রব্য ।
অক্সিজেনের পরিপ্রেক্ষিতে বিজারণ :
যে প্রক্রিয়ায় কোনো যৌগ থেকে অক্সিজেন বা অক্সিজেনের মতো  কোনো তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল বা মুলক অপসারিত হয় তাকে বিজারণ বলে ।
যেমন -CuO + H₂ → Cu + H₂O ,এই বিক্রিয়াতে CuO  হাইড্রোজেন দ্বারা বিজারিত হয়ে Cu এ পরিণত হয়েছে ।
ধাতু নিস্কাসনের নীতি :
বিজারণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে ধাতুর আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা হয় ।কি ধরনের বিজারণ বিক্রিয়ার সাহায্য নেওয়া হবে তা ধাতুটির সক্রিয়তার উপর নির্ভর করে ।ধাতুর সক্রিয়তা নির্ভর করে জল , অক্সিজেন ও লঘু এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করার প্রবণতার উপর ।ধাতুগুলিকে সক্রিয়তার উপর নির্ভর করে  একটি শ্রেণীতে রাখা হয়েছে ।
ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণী :
ধাতুগুলিকে ক্রম হ্রাসমান সক্রিয়তা অনুযাযী সাজালে যে শ্রেণী পাওয়া যায় তাকে ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণী বা তড়িৎ রাসায়নিক শ্রেণী বলে ।এই শ্রেণীতে যে ধাতু যত উপরে থাকে তার সক্রিয়তা তত বেশি  অর্থাৎ ওই ধাতুর ইলেকট্রন ত্যাগ করে ক্যাটায়ানে পরিণত হওয়ার প্রবণতা বেশি ।
                   ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণী 
 K
 Ca
 Na
 Mg
 Al
 Zn
 Fe
 Sn
 Pb
 H
 Cu
 Hg
 Ag
 Au

                    এই শ্রেণীর H এর উপরে থাকা ধাতুগুলি এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপিত করে ।কিন্তূ নিচে থাকা ধাতুগুলি অ্যাসিড থেকে হাইড্রোজেন নির্গত করতে পারে না ।
যেমন - Zn +2HCl → ZnCl₂ + H₂ 
এই সারণির উপরের দিকে থাকা ধাতু সারির নিচে অবস্থিত ধাতুর যৌগ থেকে ধাতুটিকে প্রতিস্থাপিত করে ।
যেমন - Fe + CuSO₄ →FeSO₄ + Cu
উপরের শ্রেণীর K থেকে Al পর্যন্ত ধাতুগুলির অক্সাইড কে H বা C দ্বারা বিজারিত করা যায় না ।এই সমস্ত ধাতু গুলির ক্লোরাইড বা হাইড্রোক্সাইড লবনের তড়িৎ বিশ্লেষণ দ্বারা ধাতুগুলিকে  নিষ্কাশন করা হয় ।
Zn থেকে Cu পর্যন্ত ধাতুগুলির যাকারিকগুলিকে অক্সাইড এ পরিণত করে উচ্চ তাপে  কার্বন বিজারণ দ্বারা বা থারমিট পদ্ধতিতে বা স্বতঃ বিজারণ দ্বারা নিষ্কাশন করা হয় ।
Hg থেকে Au ধাতুগুলির অক্সাইড কে উত্তপ্ত করলেই ধাতু নিষ্কাশিত হয় ।
ধাতু নিস্কাশনের কয়েকটি পদ্ধতি :
থারমিট পদ্ধতি :
উচ্চ উষ্নতায় Al দ্বারা কিছু ধাতুর ( Fe,Mn,Cr) অক্সাইড কে বিজারিত করে গলিত ধাতু উৎপন্ন করে । বিক্রিয়াটি তাপ দায়ী হওয়ায় উষ্নতা প্রায় 2000⁰C হয় ।তাই নিষ্কাশিত ধাতু তরল অবস্থায় থাকে ।
Fe₂O₃ + Al → Fe + Al₂O₃ + তাপ 
এই পদ্ধতিতে উৎপন্ন গলিত আয়রন দ্বারা রেল লাইন জোড়া লাগানো হয় ।
            Thermite Welding: Principle, Working, Equipment's, Application ...বিজারণ দ্বারা মাধ্যম সক্রিয় ধাতুর নিষ্কাশন :
সক্রিয়তা শ্রেণীর মাঝামাঝি অবস্থানকারী ধাতুগুলির কার্বোনেট ,সালফাইড ইত্যাদি যাকারিককে অক্সাইডে পরিণত করে কার্বণ দ্বারা উচ্চ উস্নতায় বিজারিত করে ধাতুগুলি নিষ্কাশন করা হয় । যেমন ZnO এর সঙ্গে C মিশিয়ে 1400⁰C উষ্নতায় উত্তপ্ত করলে ZnO বিজারিত হয়ে Zn উৎপন্ন করে ।
ZnO + C → Zn +CO 
তড়িৎ বিশ্লেষণ দ্বারা অধিক সক্রিয় ধাতুর নিষ্কাশন :
সক্রিয়তা শ্রেণীর উপরের দিকে থাকা ধাতুগুলি খুব তড়িৎ ধনাত্মক হওয়ায় এদের অক্সাইডকে কার্বন দ্বারা বিজারিত করা যায় না ।উপযুক্ত তড়িৎ দ্বার সহ এই ধাতুগুলির গলিত হাইড্রো অক্সাইড বা ক্লোরাইড লবনের তড়িৎ বিশ্লেষণ দ্বারা ধাতুগুলিকে নিষ্কাশন করা হয় । যেমন আয়রণ ক্যাথোড এবং গ্রাফাইট এনোড ব্যবহার করে গলিত NaCl এর তড়িৎ বিশ্লেষণ করে সোডিয়াম ধাতু নিষ্কাশন করা হয় ।
NaCl →  Na⁺ + Cl⁻
ক্যাথোডে :  Na⁺ + e → Na (বিজারণ )
এনোডে : Cl⁻→ Cl +e (জারণ ) , Cl +Cl→Cl₂
ধাতুর ক্ষয় ।
লোহায় মরিচা ধরা  ও তার প্রতিকার 
লোহা বা লোহাজাত দ্রব্যকে আর্দ্র বায়ুতে খোলা অবস্থায় রেখে দিলে লোহার ওপর একটি লালচে বাদামি বর্ণের আস্তরণ পড়ে একে মরিচা বলে ।এটি এক প্রকারের সোদক ফেরিক অক্সাইড (Fe₂O₃ , x  H₂O) ; x এর মান পরিবর্তণ শীল ,তবে মোটামুটিভাবে x = 3 হয় ।
মরিচা পড়ার শর্ত - অক্সিজেন এবং জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে মরিচা পড়ে ।
মরিচা পড়া একটি তড়িৎ রাসায়ানিক বিক্রিয়া । আয়রন খন্ডে উপস্থিত অশুদ্ধি (কার্বন) ও অন্যান্য কারণে একটি তড়িৎ কোষের  সৃষ্টি হয় ।
যে সব কারণে মরিচা পড়া ত্বরান্বিত হয় :
বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমান বাড়লে মরিচা ধরা ত্বরানিত হয় । উষ্নতা বৃদ্ধিতে মরিচা পড়ার হার বৃদ্ধি পায় ।জলে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ যেমন     NaCl থাকলে এবং ওই  জলে লোহ দ্ৰব্য আংশিক নিমজ্জিত থাকলে মরিচা পড়া ত্বরান্বিত হয় ।
মরিচা পড়া নিবারণের উপায় :
আয়রণ নির্মিত বস্তুর ওপর আলকাতরা বা রং বা বার্ণিশের প্রলেপ দিয়ে মরিচা নিবারণ করা হয় । আয়রণ নির্মিত বস্তুর উপর গলিত জিংক এর প্রলেপকে গালভানাইজেশন বলে ।এর দ্বারা মরিচা পড়া নিবারণ করা হয় ।তড়িৎ লেপন পদ্ধতিতে লোহার উপর নিকেলের বা ক্রোমিয়ামের প্রলেপ দিয়ে মরিচা পড়া  থেকে বিরত  রাখা যায় ।
                                               অনুশীলনী 
বাহুবিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন : https://forms.gle/MJHFYZxXCS73GMkM6
1.গালভানাইজেশনের কাজে কোন ধাতুটি লাগে ?
A ) Fe  B) Cu C) Zn  D) Al
2.এলুমিনিয়ামের আকরিক হল 
A) হিমাটাইট  B) গিবসাইট  C) কালামাইন  D) ম্যালাকাইট 
3.নীচের কোনটি আয়রণের সংকর ধাতু ?

A) ডুরালুমিন  B) ইনভার  C) ম্যাগনেলিয়াম  D) গানমেটাল 
4.গোল্ডস্মিডের থারমিট পদ্ধতিতে কোন ধাতু ব্যবহৃত হয় ?
A) Fe  B) Al C) Cu D) Zn
5. অতি সক্রিয় ধাতুটি হল 
A) K B) Ag C) Fe D) Cu
6. লোহাতে মরিচা পড়ার জন্য প্রয়োজনীয়  উপাদান 
A) N₂,O₂  B)  N₂,H₂  C) O₂,H₂O D) H₂O,CO₂
7.কার্বণ বিজারণ পদ্ধতিতে  নিষ্কাশন করা হয় 
A) Na  B) K  C) Ca D) Zn
8.বেসিক কপার কার্বোনেটের রং হল 
A) কালো  B) লাল  C) বাদামী  D) সবুজ
9. কপার এর  একটি আকরিক  হল 
A) ক্যালামাইন  B) কপার গ্লান্স  C) বক্সাইট  D) সিডেরাইট 
10. হেমাটাইট  নীচের কোন ধাতুর আকরিক ?
A) Cu  B) Al  C) Fe  D) Zn

পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ণ

এমোনিয়া : 
সংকেত - NH₃ আনবিক ওজন  - 17
নাইট্রোজেন  ঘটিত  উদ্ভিজ  বা  প্রাণীজ পদার্থের ( মূত্র ) ব্যাকটেরিয়া  ঘটিত  বিয়োজনের  ফলে  এমোনিয়া  উৎপন্ন হয় । তাই প্রস্রাবাগারে  এমোনিয়ার  গন্ধ পাওয়া যায় ।
পরীক্ষাগারে এমোনিয়া প্রস্তুতির  নীতি :
এমোনিয়াম ক্লোরাইড বা  এমোনিয়াম সালফেটকে চুন বা  শুস্ক কলিচুন  বা  কস্টিক সোডা  সহ উত্তপ্ত করলে এমোনিয়া  উৎপন্ন হয় ।
রাসায়নিক সমীকরণ :
                         তাপ 
1) 2NH₄Cl + CaO  ⟶ 2NH₃ + CaCl₂ + H₂O
                                  তাপ 
2) 2NH₄Cl  + Ca(OH)₂  ⟶ 2NH₃ + CaCl₂ + 2H₂O
বিক্রিয়ার শর্ত : তাপ প্রয়োগে  বিক্রিয়া  ঘটে ।
      
Lab preparation of Ammonia - QS Study
পদ্ধতি :
এমোনিয়াম ক্লোরাইড ও কলিচুনের  মিশ্রণকে ( 1 ։ 3 ) গোলতল ফ্লাস্কে বুনসেন বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করলে এমোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন  হয়ে নির্গম নল দিয়ে  বেরিয়ে আসে এবং  চুন (CaO) স্তম্ভের মধ্যে  গিয়ে জলীয় বাস্প  মুক্ত হয় এবং অবশেষে শুস্ক এমোনিয়া  গ্যাস  বায়ুর নিম্ন অপসারণ  দ্বারা উপুড় করা গ্যাস জারে সংগৃহিত হয় ।
এমোনিয়া সুস্ককরণ :
এমোনিয়া ক্ষারীয় হওয়ায় অপর জলশোসক ক্ষারীয় পদার্থ পোড়া চুন(CaO) দ্বারা শুস্ক করা  হয় ।
গাঢ় H₂SO₄ বা  P₂O₅ বা  অনার্দ্র CaCl₂ দ্বারা  শুস্ক  করা  যায়  না । কারণ  এমোনিয়া ক্ষার ধর্মী  হওয়ায় এদের সঙ্গে বিক্রিয়া করে  যায় ।
1)  2NH₃ + H₂SO₄  ⟶ (NH₄)₂SO₄(এমোনিয়াম সালফেট )
2)6 NH₃+  P₂O₅  +3 H₂O ⟶ (NH₄)₃PO₄ (এমোনিয়াম ফসফেট )
3) 8NH₃  + CaCl₂ ⟶ CaCl₂.8NH₃(এক প্রকার যুত যৌগ )
এমোনিয়ার ধৰ্ম :
ভৌত ধৰ্ম  - 1) এমোনিয়া তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত ,  বায়ু  অপেক্ষা  হালকা  গ্যাস । এর বাস্প ঘণত্ব 8.5 |
2) বায়ুমণ্ডলীয় চাপে  - 33.4⁰C উষ্নতায় বর্ণহীন  তরলে  পরিণত হয় । একে তরল এমোনিয়া বলে ।
3) এমোনিয়া জলে অতিশয় দ্রাব্য এবং এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী ।
এমোনিয়ার রাসায়নিক ধৰ্ম :
1) ক্ষার ধৰ্ম - এর  জলীয়  দ্রবণ  মৃদু  ক্ষার ধর্মী । জলে  দ্রবীভূত হলে  ক্ষার  উৎপন্ন  হয় ।
NH₃  + H₂O  ⟶ NH₄OH(এমোনিয়াম হাইড্রো অক্সাইড ) এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় লবণ গঠন  করে । এমোনিয়া  হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের(HCl)সঙ্গে বিক্রিয়ায় কঠিন  এমোনিয়াম ক্লোরাইডের( NH₄Cl)সাদা ধুঁয়া উৎপন্ন  করে ।
এই বিক্রিয়া  দ্বারা এমোনিয়া কে সনাক্ত করা যায় ।
সালফিউরিক  এসিডের  সান সঙ্গে বিক্রিয়া  করে এমোনিয়াম সালফেট  উৎপন্ন  করে ।
2NH₃  + H₂SO₄⟶ (NH₄)₂SO₄
নাইট্রিক এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া  করে  এমোনিয়াম নাইট্রেট  লবন  গঠন  করে ।
NH₃+HNO₃ ⟶NH₄NO₃ 
2) বিজারণ ধৰ্ম :
উত্তপ্ত কপার অক্সাইড এর  মধ্য  দিয়ে এমোনিয়া চালনা করলে কপার অক্সিডেকে বিজারিত করে লাল কপার এ পরিণত করে এবং নিজে জারিত হয়ে নাইট্রোজেনে পরিণত হয় । এই বিক্রিয়াতে প্রমাণিত হয় এমোনিয়াতে নাইট্রোজেন আছে ।
 3CuO  + 2NH₃   ⟶ 3Cu + N₂ +3H₂O
একই রকম বিক্রিয়া ঘটে লেড অক্সাইড এর  সঙ্গে ,
3PbO  + 2NH₃ ⟶ + N₂  3H₂O
এমোনিয়ার জারণ :
অ্যামোনিয়া  নিজে  জ্বলে না  অপরকে জ্বলতে ও সাহায্য  করে  না , কিন্তূ  অক্সিজেনের উপস্থিতিতে  অ্যামোনিয়া গ্যাসে আগুন  ধরালে জারিত হয়ে  নাইট্রোজেন  উৎপন্ন করে ।
4NH₃ + 3O₂   ⟶ 2 N₂  + 6 H₂O
অ্যামোনিয়া  ও অতিরিক্ত অক্সিজেনের মিশ্রণকে 700⁰ C  উস্নতায়  উত্তপ্ত Pt  তারজালির ওপর দিয়ে অতি দ্রুত  পাঠালে 
অ্যামোনিয়া জারিত  হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন  হয় ।
 4NH₃  + 6O₂  ⟶ 4NO  + 6H₂O + তাপ 
সোডিয়াম ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া :
প্রায় 300⁰ C তাপমাত্রায়  উত্তপ্ত  সোডিয়ামের  ওপর দিয়ে অ্যামোনিয়া চালনা করলে সোডামাইড  ও হাইড্রোজেন  গ্যাস উৎপন্ন হয় । এর দ্বারা প্রমাণিত  হয় অ্যামোনিয়া তে  হাইড্রোজেন আছে ।
 2 Na + 2NH₃ ⟶ 2NaNH₂ + H₂ 
সোডামাইড এর  সঙ্গে  জল  যোগ করলে পুনারায় অ্যামোনিয়া  পাওয়া যায় ।
NaNH₂  + H₂O  ⟶  NaOH + NH₃
ধাতব লবনের সঙ্গে বিক্রিয়া :
অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড এর জলীয়  দ্রবণে NH₄OH এর  দ্রবণ যোগ করলে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রো অক্সাইড এর সাদা অধঃক্ষেপ পড়ে ।
AlCl₃ + 3NH₄OH ⟶ Al(OH)₃ + 3NH₄Cl 
হলুদ বর্ণের ফেরিক ক্লোরাইড দ্রবণে NH₄OH দ্রবণ যোগ করলে বাদামি বর্ণের ফেরিক হাইড্রো অক্সাইড অধঃক্ষিপ্ত  হয় ।
FeCl₃  + 3NH₄OH ⟶  Fe(OH)₃ + 3NH₄Cl
নেসলার বিকারকের সঙ্গে  বিক্রিয়া:
পটাসিয়াম মারকিউরিক আয়োডাইডের ( K₂HgI₄) ক্ষারীয় দ্রাবনকে নেসলার বিকারক  বলে । নেসলার বিকারক অ্যামোনিয়া র  সান সংস্পর্শে আসলে তামাটি বর্ণ ধারণ  করে ।
লাইকার অ্যামোনিয়া :
উচ্চ চাপে প্রায় 35 % অ্যামোনিয়া গ্যাসকে জলে দ্রবীভূত করা হয় । একে লাইকার অ্যামোনিয়া  বলে । লাইকার অ্যামোনিয়া যুক্ত বোতলের ছিপি খুললে উচ্চ চাপে দ্রবীভূত অ্যামোনিয়া  ফোয়ারার মত্ বেরিয়ে আসে । অ্যামোনিয়া গ্যাস চোখের পক্ষে খুব ক্ষতিকারক ,চোখে পড়লে দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে যেতে  পারে । তাই  বোতলের  ছিপি  খোলার আগে বোতলটিকে  বরফ জলে শীতল করলে দ্রাব্যতা বৃদ্ধি পায় এবং অ্যামোনিয়া ছিটকে বেরিয়ে আসে  না ।
হিমায়ক রূপে  তরল অ্যামোনিয়ার ব্যবহার :
 তরল অ্যামোনিয়া র  বাষ্পীভবনের লিনতাপ অনেক  বেশি । তাই তরল অ্যামোনিয়া  যখন বাষ্পী ভূত  হয়  তখন  পারিপার্শ থেকে প্রচুর তাপ শোষিত হয় । এই  জন্য  রেফ্রিজারেটর ,কোল্ডস্টোরেজ  ও বরফ তৈরির কারখানায়  ব্যবহৃত হয় ।
অ্যামোনিয়ার  শিল্প উৎপাদন ( হেবার পদ্ধতি ):
আয়রন চূর্ণ  অনুঘটক  এবং K₂O ও  Al₂O₃ উদ্দীপক রূপে ব্যবহার করে  বিশুদ্ধ ও শুস্ক  নাইট্রোজেন  ও  হাইড্রোজেনের মিশ্রণকে 200 বায়ু মন্ডলীয় চাপে 450⁰ C উষ্নতায় উত্তপ্ত করলে অ্যামোনিয়া  উৎপন্ন  হয় ।
N₂  + 3H₂ ⇌2 NH₃ +তাপ 
শিল্পে অ্যামোনিয়ার ব্যবহার :
অ্যামোনিয়াম সালফেট ,অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ,অ্যামোনিয়াম ফসফেট  প্রভৃতি অজৈব  সার এবং জৈব সার ইউরিয়া  প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয় ।
ইউরিয়ার (H₂NCONH₂ )শিল্প  উৎপাদন :
উচ্চ চাপে ( প্রায় 175 বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ) ও 170 - 190⁰C উষ্নতায় বদ্ধ পাত্রে  তরল অ্যামোনিয়া ও কার্বন -ডাই -অক্সাইড র  বিক্রিয়া  ঘটিয়ে প্রথমে অ্যামোনিয়াম কার্বামেট  ও পরে এটি বিয়োজিত হয়ে ইউরিয়া ও জলে  পরিণত  হয় ।
2 NH₃ + CO₂  ⇌ H₂NCOONH₄ ( অ্যামোনিয়াম কার্বামেট)
H₂NCOONH₄  ⇌  H₂NCONH₂ + H₂O
ইউরিয়ার ব্যবহার :
নাইট্রোজেন ঘটিত জৈব  সার  রূপে ,কালা জ্বরের ঔষধ  ইউরিয়া স্টিবামিন  ও ঘুমের ঔষধ বারবিটিউরেট নামক  জৈব যৌগ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয় । নাইট্রসেলুলেজ  ,সেলোফেন ও রেয়ন  প্রভৃতির শিল্প উৎপাদনে ইউরিয়া ব্যবহৃত  হয় ।


হাইড্রোজেন সালফাইড বা  সালফিউরেটেড হাইড্রোজেন :
সংকেত - H₂S , আনবিক ওজন - 34
হাইড্রোজেন সালফাইড এর পরীক্ষাগার প্রস্তুতি :
        Chemistry HSEB notes | Labarotory preparation of hydrogen sulphide ...

নীতি ও শর্ত :
সাধারণ উষ্নতায়  ফেরাস সালফাইড (FeS ) ও লঘু সালফিউরিক এসিড(H₂SO₄)এর  বিক্রিয়ায় H₂S গ্যাস  উৎপন্ন  হয় |
FeS + H₂SO₄(লঘু ) ⟶ FeSO₄ + H₂S 
পদ্ধতি - উল্ফ বোতলের সাহায্যে পৰীক্ষাগারে H₂S  তৈরি করা  হয় ।
গ্যাস সংগ্রহ  - গ্যাসটি বায়ু অপেক্ষা ভারী  বলে  বায়ুর  উর্ধ অপসারণ দ্বারা  সংগ্রহ  করা  হয় ।
H₂S এর শুস্ক করণ  -  H₂S কে  P₂O₅ দ্বারা  শুষ্ক  করা  হয় ।
H₂S প্রস্তুতিতে গাঢ়  H₂SO₄ ব্যবহার  করা  হয় না , কারণ গাঢ়  H₂SO₄ তীব্র  জারক  পদার্থ  যা  উৎপন্ন H₂S কে  জারিত করে সালফারে   করে ,ফলে H₂S পাওয়া  যায় না ।
H₂S    + H₂SO₄  ⟶  S + SO₂ + 2H₂O 
লঘু H₂SO₄ এর  জারণ ক্ষমতা না থাকার  দরুন লঘু  H₂SO₄ ব্যবহার করা  হয় ।
হাইড্রোজেন সালফাইড এর  ধৰ্ম 
ভৌত ধৰ্ম :
H₂S  পচা ডিমের গন্ধযুক্ত , বর্ণহীন বিষাক্ত গ্যাস । এই গ্যাস  বায়ু  অপেক্ষা  1.2 গুন্  ভারী । ঠান্ডা জলে দ্রাব্য কিন্তূ  গরম  জলে  অদ্রাব্য ।
হাইড্রোজেন সালফাইডের রাসায়নিক ধৰ্ম :
H₂S  এর এসিড ধৰ্ম - H₂S  এর  জলীয়  দ্রবণ  মৃদু  অ্যাসিড  ধর্মী জলীয়  দ্রবণে  আয়োনিত হয়ে  বাই সালফাইড (HS⁻) ও সালফাইড ( S²⁻) আয়ন  উৎপন্ন  করে ।
 H₂S  + H₂O ⇌ H₃O⁺  + HS⁻ ; H₂S  + 2H₂O ⇌ H₃O⁺ + S²⁻ 
ক্ষারের সঙ্গে  বিক্রিয়া :
H₂S ও NaOH  বিক্রিয়া করে সোডিয়াম বাই সাল ফাইড  ও সোডিয়াম সাল ফাইড লবণ উৎপন্ন করে । 
H₂S +NaOH  ⟶  NaHS  + H₂O   ;  H₂S +2NaOH ⟶ Na₂S  + 2H₂O
H₂S  এর জারণ :
H₂S নিজে দাহ্য নয় দহন সহায়ক নয় ।বায়ুতে বা  অক্সিজেনে  এটি নীল শিখা সহ জ্বলে । অপর্যাপ্ত অক্সিজেনে  সালফার উৎপন্ন হয়  কিন্তু পর্যাপ্ত অক্সিজেনে সালফার ডাই অক্সাইড উৎপন্ন  হয় ।
2H₂S + O₂ ⟶ 2S + 2H₂O  ;    2H₂S  +3 O₂ ⟶ 2SO₂ + 2H₂O

H₂S  এর বিজারণ ধৰ্ম :
এসিড যুক্ত পটাশিয়াম ডাইক্রোমেট( K₂Cr₂O₇) এর কমলা বর্ণের  দ্রবনের মধ্য দিয়ে H₂S  চালনা করলে  ডাইক্রোমেটকে বিজারিত করে সবুজ বর্ণের ক্রমিক লবন তৈরি  করে ।
K₂Cr₂O₇ + 3H₂S + 4H₂SO₄ ⟶ Cr₂(SO₄)₃ + K₂SO₄ + 3S + 7H₂O
ধাতব লবনের সঙ্গে H₂S এর  বিক্রিয়া :
a) কপার সালফেটের সঙ্গে  বিক্রিয়া - নীল বর্ণের কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের  সঙ্গে বিক্রিয়া করে কালো বর্ণের কপার সালফাইড অধঃক্ষিপ্ত করে ।
CuSO₄ + H₂S ⟶ CuS(কালো ) + H₂SO₄
b) লেড নাইট্রেটের সঙ্গে  বিক্রিয়া  - লেড নাইট্রেটের বর্ণহীন জলীয়  দ্রবণে  H₂S চালনা করলে কালো  বর্ণের লেড সালফাইড অধঃক্ষিপ্ত  হয় । 
Pb(NO₃)₂ + H₂S ⟶ PbS(কালো ) +2 HNO₃
c) সিলভার নাইট্রেট দ্রবনের সঙ্গে  বিক্রিয়া  -  সিলভার নাইট্রেট দ্রবনে H₂S  চালনা করলে  কালো  বর্ণের সিলভার সালফাইড উৎপন্ন  হয় ।
2AgNO₃ + H₂S  Ag₂S(কালো ) + 2 HNO₃
 H₂S এর বিষক্রিয়া :
 H₂S বিষাক্ত  গ্যাস ।এর সংস্পর্শে  চোখ জ্বালা ,মাথাধরা ও বমিভাব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায় ।পরিবেশে  H₂S 100 ppm অপেক্ষা বেশি থাকলে পক্ষাঘাত  এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।
প্রতিকার - ক্লোরিনের লঘু জলীয় দ্রবণ H₂S এর বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।

                                                         নাইট্রোজেন 
সংকেত - N₂                                                                             আনবিক ওজন - 28
বায়ু মণ্ডলের প্রায় 79% নাইট্রোজেন ।
নাইট্রোজেনের পরীক্ষাগার প্রস্তুতি :
Notes on Nitrogen | Grade 9 > Science > Some Gases | KULLABS.COM

প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য :
সোডিয়াম নাইট্রাইট (NaNO₂) ও এমোনিয়াম ক্লোরাইড ( NH₄Cl) ।
সোডিয়াম নাইট্রাইট ও আমমোনিয়ামক্লোরাইড  কে 1 :1 মোল অনুপাতে মিশিয়ে ধীরে ধীরে গরম করলে নাইট্রোজেন উৎপন্ন হয় ।বিক্রিয়াটি দুটি ধাপে সংঘটিত হয় ।
1) NaNO₂ + NH₄Cl ⟶ NaCl + NH₄NO₂
2)NH₄NO₂⟶ N₂  +  2H₂O

NH₄NO₂ কে সরাসরি উতপ্ত করা হয় না , কারণ সরাসরি গরম করলে প্রচন্ড তাপ উৎপন্ন হয় ফলে বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।তাই বিক্রিয়াটি দুটি ধাপে সম্পন্ন করা হয় ।
নাইট্রোজেনের ধৰ্ম :
ভৌতধর্ম - নাইট্রোজেন  বর্ণহীন ,গন্ধহীন  গ্যাস । এটি বিষাক্ত নয় কিন্তূ শ্বাস কার্য্যে সাহায্য করে  না ।
রাসায়নিক ধৰ্ম :
নাইট্রোজেন অণুতে দুটি  নাইট্রোজেন পরমাণু  পরস্পর ত্রিবন্ধন  দ্বারা যুক্ত থাকে ; বন্ধনটি খুব দৃঢ় হওয়ায় অণুটিকে বিয়োজিত করতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন ।তাই সাধারণ উষ্নতায় নাইট্রোজেন একটি নিষ্ক্রিয় প্রকৃতির  গ্যাস ।
ম্যাগনিসিয়ামের সঙ্গে বিক্রিয়া -উচ্চ উস্নতায় নাইট্রোজেন ম্যাগনেসিয়াম ধাতুর সঙ্গে  যুক্ত হয়ে ম্যাগনেসিয়াম নাইট্রাইড গঠন করে ।
3Mg  +  N₂ ⟶ Mg₃N₂
ম্যাগনেশিয়াম নাইট্রাইডের সঙ্গে  গরম জলের বিক্রিয়াতে অ্যামোনিয়া তৈরি  হয় ।
Mg₃N₂  +6 H₂O ⟶ 3Mg(OH)₂ +  2NH₃
অক্সিজেনের সঙ্গে  বিক্রিয়া:
3000⁰C তাপমাত্রায়  বিদ্যুৎ ফুলিঙ্গের সাহায্যে নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন সরাসরি যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড গঠন করে ।
N₂ + O₂ ⟶ 2NO 
হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া -
200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে 450⁰C তাপমাত্রায় আয়রণ চূর্ণ অনুঘটক এবং K₂O ও Al₂O₃ উদ্দীপকের উপস্থিতিতে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন যুক্ত হয়ে অ্যামোনিয়া গঠন করে ।
N₂  + 3H₂ ⇌2 NH₃ +তাপ
ক্যালসিয়াম কার্বাইডের সঙ্গে বিক্রিয়া :
1100⁰C উষ্নতায় ক্যালসিয়াম কার্বাইডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম সায়ানামাইড ও কার্বন উৎপন্ন  করে ।
ক্যালসিয়াম সায়ানামাইড(CaCN₂) ও কার্বন এর মিশ্রণকে নাইট্রোলিম বলে । ইহা নাইট্রোজেন ঘটিত সার হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।
CaC₂ + N₂  ⟶ CaCN₂ + C
নাইট্রোজেনের আবদ্ধিকরণ :
কৃত্রিম বা প্রাকৃতিক উপায়ে বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেনকে নাইট্রোজেন ঘটিত যৌগে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে নাইট্রোজেনের আবদ্ধিকরণ বলে । আকাশে মেঘের মধ্যে যখন বিদ্যুৎ ক্ষরণ  হয় তখন বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) গঠন করে । এই নাইট্রিক অক্সাইড বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা পুনরায় জারিত হয়ে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড(NO₂) গঠন করে ।বৃষ্টির জলে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড দ্রবীভূত হয়ে নাইট্রিক এসিড (HNO₃) ও নাইট্রাস এসিডে(HNO₂) পরিণত হয় এবং বৃষ্টির জলের সঙ্গে মাটিতে পড়ে যায় ।নাইট্রাস এসিড অস্থায়ী ।নাইট্রিক এসিড মাটির ক্ষার বা ক্ষারকের সঙ্গে বিক্রিয়া  করে দ্রাব্য নাইট্রেট লবন গঠন করে এবং মাটিতে মিশে যায় ।
হাইড্রোক্লোরিক এসিডের শিল্প প্রস্তুতি :
আধুনিক সংশ্লেষণ পদ্ধতি - হাইড্রোজেন  ও ক্লোরিন গ্যাসের সম আয়তনিক মিশ্রণকে একটি সিলিকা নির্মিত প্রকোষ্টে জ্বালানো হয় ।এতে H₂ ও Cl₂ গ্যাস যুক্ত হয়ে HCl গ্যাস উৎপন্ন হয় ।
H₂ + Cl₂ ⟶ 2HCl
উৎপন্ন HCl  গ্যাসকে হিম কক্ষের মধ্যে পাঠিয়ে শীতল করা হয় । শীতল HCl গ্যাসকে  জলে শোষিত করে গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সম্পৃক্ত দ্রবণ প্রস্তুত করা  হয় ।ভর হিসাবে এতে  36% HCl গ্যাস দ্রবীভূত থাকে ।
অসওয়াল্ড পদ্ধতিতে নাইট্রিক এসিডের শিল্প প্রস্তুতি :
এই পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া কে জারিত করে  নাইট্রিক অ্যাসিড প্রস্তুত করা  হয় ।শুস্ক ও বিশুদ্ধ ধুলিকণামুক্ত অ্যামোনিয়া  ও বায়ুর  মিশ্রণকে 5-7 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ,700 -800⁰C উষ্নতায় উতপ্ত প্ল্যাটিনাম তারজালি এর ওপর   দিয়ে প্রবাহিত করলে অ্যামোনিয়া জারিত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন করে । 
1)  4 NH₃ + 5O₂ ⟶4 NO + 6H₂O
উৎপন্ন নাইট্রিক অক্সাইড কে দ্রুত শীতল করে বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জরিত করে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এ রূপান্তরিত করা হয় ।
2) 2NO + O₂ ⟶ 2NO₂
এই ভাবে উৎপন্ন NO₂ কে  জল  দ্বারা  শোষিত করে নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপন্ন করা  হয়  ও NO গ্যাস নির্গত হয় ।
নির্গত  NO গ্যাসকে পুনরায় অক্সিজেন দ্বারা  জারিত করে নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় ।
3)  3NO₂ + H₂O ⟶  2HNO₃ + NO 
       Nitric Acid - Study Material for IIT JEE | askIITians

স্পর্শ পদ্ধতি দ্বারা সালফিউ রিক অ্যাসিড(H₂SO₄) প্রস্তুতি :
আয়রন পাইরাইটিস (FeS₂) বা সালফারকে অতিরিক্ত বায়ুতে পুড়িয়ে সালফার ডাই অক্সাইড(SO₂)  গ্যাস উতপন্ন করা |হয় ।SO₂ ও বায়ুর মিশ্রণকে বিশুদ্ধ ও শুস্ক করে 450⁰C উস্নতায় 1 -1.5 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে প্ল্যাটিনাম অ্যাসবেসটস  বা ভ্যানাডিয়াম পেন্টঅক্সাইড (V₂O₅) অনুঘটকের চালনা করলে SO₂ গ্যাস বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে সালফার ট্রাই অক্সাইড(SO₃ )  উৎপন্ন করে ।বিক্রিয়াটি উভমুখী ও তাপমোচি ।
S + O₂ ⟶ SO₂ ; 
2SO₂ + O₂ ⟶ 2SO₃ + তাপ 
SO₃ কে ঠান্ডা করে কোক ভর্তি শোষক স্থম্ভে 98% গাঢ় H₂SO₄ দ্বারা শোষিত হয়ে ওলিয়াম উৎপন্ন হয় ।
H₂SO₄ + SO₃ ⟶ H₂S₂O₇ (ওলিয়াম )
ওলিয়ামের সঙ্গে পরিমান মত পাতিত জল মিশিয়ে 98% গাঢ় H₂SO₄ অ্যাসিড প্রস্তুত করা  হয় ।
 H₂S₂O₇  + H₂O ⟶2 H₂SO₄
           Manufacture of sulphuric acid in industry - YouTube

বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ): https://forms.gle/uNiyCug3YcsxiS1KA
1) কোনটি দ্বারা অ্যামোনিয়া কে শুস্ক করা হয় ?
A) গাঢ় H₂SO₄ B) অনার্দ্র CaCl₂ C) CaO  D) P₂O₅
2) কোণ গ্যাসের সংস্পর্শে নেসলের  দ্রবণ তামাটে হয় ?
A) N₂  B) HCl  C) NH₃  D) H₂S
3) ক্ষারীয় সোডিয়াম নিটরপ্রুসাইড দ্রবণে H₂S চালনা করলে দ্রবণ টির বর্ণ হয় 
A) লাল  B) নীল   C) সবুজ  D) বেগুনী 
4) স্পর্শ পদ্ধতিতে  H₂SO₄ এর প্রস্তুতিতে যে অনুঘটকটি  ব্যবহার করা হয় তা হল 
A) MnO₂  B) V₂O₅ C) আয়রণ চূর্ণ  D) কোনোটাই নয় 
5) ফেরিক হাইড্রো অক্সিডের Fe(OH)₃  বর্ণ  হল 
A) হলুদ  B) সাদা  C) কালো  D) বাদামী 
6) অস ওয়াল্ড পদ্ধতিতে HNO₃ প্রস্তুত করতে অনুঘটক হিসাবে ব্যবহৃত  হয় 
A) 10% রেডিয়াম যুক্ত প্ল্যাটিনাম তারজালি  B) প্ল্যাটিনাম চূর্ণ  C) ভ্যানাডিয়াম পেন্ট অক্সাইড  D) লৌহ চূর্ণ 
7) নাইট্রোজেন আবদ্ধ করণের প্রথম ধাপে বিদুৎপাতের ফলে নীচের কোনটি উৎপন্ন হয় ?
A) NO  B) NO₂ C)  N₂O₅ D) HNO₃
8) লাল লিটমাসের দ্রবনের বর্ণ নীল করে 
A)  H₂S B) NH₃  C) N₂ D) HCl
9) লা ব্ল্যাঙ্ক পদ্ধতিতে প্রস্তুত হয় 
A) HCl B) H₂SO₄ C)  HNO₃  D) ইউরিয়া 
10) নীচের কোন গ্যাসটি কিপ যন্ত্রে  প্রস্তুত করা হয় ?
A) N₂  B) H₂S  C) HCl  D)  NH₃
11) কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণে অতিরিক্ত পরিমাণ জলীয় অ্যামোনিয়া যোগ করলে দ্রবনের রং কি হবে ?
A) হলুদ  B) সবুজ  C) গাঢ় নীল  D) বাদামী 

Environmental Concern (পরিবেশের জন্য ভাবনা)

পরিবেশ :
প্রাণী  বা  উদ্ভিদ  তার  জীবন  চক্রের যেকোনো  সময়ে যে  সব  সজীব  বা  জড় উপাদান গুলির  দ্বারা  প্রবাভিত হয় ,তাদের সমষ্টিকে  পরিবেশ বলে । পরিবেশের সজীব উপাদান  হল  মানুষ ,গাছপালা ,পশুপাখি ,কীটপতঙ্গ  ইত্যাদি । আর নির্জীব উপাদান  হল  বায়ু ,মাটি  ও জল  ইত্যাদি । জল  মাটি  ও বায়ু  ক্রমশ  দূষিত  হচ্ছে । ফলে  পরিবেশের  ভারসাম্য  বিঘ্নিত হচ্ছে । এই  ভারসাম্য  রক্ষা করার  এক  মাত্র  উপায় হল পরিবেশকে  তার  স্বাভাবিক  অবস্থায় ফিরিয়ে  আনা ।
বায়ুমণ্ডল :
ভূপৃষ্ট থেকে  প্রায় 1600 km উচ্চতা পর্যন্ত  যে অদৃশ্য  গ্যাসীয়  আবরণ  পৃথিবীকে  ঘিরে  রেখেছে  তাকে  বায়ুমণ্ডল  বলে ।

                   Layers of the atmosphere | NIWA
    
               Why does the temperature of the atmosphere vary?
                  
বায়ুমণ্ডলের প্রধান উপাদান  গুলি - নাইট্রোজেন ,অক্সিজেন  ,কার্বন -ডাই  -অক্সাইড , নিষ্ক্রিয়  গ্যাস , হাইড্রোজেন ও জলীয় বাস্প ,ধূলিকণা  ইত্যাদি ।বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর  উষ্নতা  নিয়ন্ত্রণ করে এবং  সূর্য্য  থেকে  আগত ক্ষতিকারক  অতি বেগুনী রশ্মির বিকিরণ থেকে  পৃথিবীকে  রক্ষা  করে ।
উষ্নতা ও  উচ্চতার  ভিত্তিতে  বায়ুমণ্ডলকে  পাঁচ ভাগে  ভাগ করা  হয় । 1) ক্ষুব্ধ মণ্ডল বা  ট্রপোওফিয়ার  2) শান্ত মন্ডল  বা স্ট্রাটো স্ফ্রেয়ার  3) মেসো স্পিয়ার  4) থার্মোস্পিয়ার  5) এক্সওস্পিয়ার 
উচ্চতা বৃদ্ধিতে তাপমাত্রার পরিবর্তন  বিভিন্ন হলেও চাপ  প্রতিটি স্তরের  ক্ষেত্রে  ক্রমশ  কমতে  থাকে ।
1) ক্ষুব্ধ মণ্ডল বা  ট্রপোওফিয়ার :
ভূ পৃষ্ট  থেকে  10 - 12 km উচ্চতা  পর্যন্ত  এই স্তর  বিস্তৃত ।সমগ্র  বায়ুমণ্ডলের  প্রায় 75 % বায়ু  এই  স্তরে  থাকে । এই স্তরের বায়ুতে  ধূলিকণা ,জলীয় বাস্প  ,মেঘ ইত্যাদি  থাকে ; ঝড় বৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক  ঘটনা গুলি  ঘটে । তাই  একে  ক্ষুব্ধ মণ্ডল  বলে । উচ্চতা  বৃদ্ধিতে  এই  স্তরের  উষ্নতা  ও চাপ  উভয়েই কমে ।প্রতি km উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্নতা প্রায়  6.5 ⁰ C কমে । এই স্তরের উপরের  দিকে  উষ্নতা  প্রায়  - 56⁰ C  হয় ।
বায়ু মণ্ডলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নের ছকে দেওয়া হল :
 অঞ্চল  ভূপৃষ্ট থেকে উচ্চতা  উষ্নতার পরিসর(⁰C)  গ্যাসীয় উপাদান 
 ট্রপোওফিয়ার 0 - 12 km  +15 থেকে  -60 (উচ্চতা বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা কমে ) N₂,O₂,CO₂,H₂O
 স্ট্রাটো স্ফ্রেয়ার  12 - 45 km -60 থেকে  0 (উচ্চতা বৃদ্ধিতে  বাড়ে )  N₂,O₂,O₃
  মেসো স্পিয়ার   45- 85 km  0 থেকে  -100 (উচ্চতা  বৃদ্ধিতে উষ্নতা কমে ) N₂,O₂,O₂⁺,NO⁺
 থার্মোস্পিয়ার 85 - 500 km  -100 থেকে + 1200 (উচ্চতা  বৃদ্ধিতে  উষ্নতা বাড়ে ) O₂⁺, O⁺,NO⁺
  এক্সওস্পিয়ার  500 - 1000 km  > 1200  H₂,He
ওজোন স্তর :
স্ট্রাটো স্পিয়ার  এর  মধ্যে  ভূ পৃষ্টের  16 km ওপর থেকে  শুরু  করে 30 km উচ্চতা পর্যন্ত  ওজোন(O₃ ) গ্যাসের  একটি স্তর দেখা যায় ওজোন স্তর বলে ।এই ওজোন স্তর সূর্য্য থেকে  আগত ক্ষতিকর অতি বেগুনী রশ্মিকে শোষণ করে পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয় ।অক্সিজেন অণু অতি বেগুনী রশ্মি শোষণ করে অক্সিজেন পরমাণুতে বিয়োজিত হয় । এই পারমানবিক অক্সিজেন অক্সিজেন অণুর সঙ্গে  যুক্ত  হয়ে ওজোন  অণু গঠন  করে ।
ওজোন গ্যাসের  উৎপাদন :
O₂  + UV রশ্মি  ⟶  O + O ; O₂  + O ➝ O₃ 
ওজোন অণুর বিয়োজন :
 O₃  + UV রশ্মি  ⟶  O₂  + O ; O₃ +O  ⟶ 2 O₂
উপরের দুই  প্রক্রিয়ার  মধ্যে একটি  সাম্যাবস্থা  বজায়  থাকে ,ফলে  ওজোন গ্যাসের  পরিমান স্থির  থাকে ।
পরিবেশ দূষণের কারণে বর্তমানে ওজন স্তরটি পাতলা হয়ে  যাচ্ছে ।এই ওজোন গ্যাসের পরিমান কমে যাওয়া কে ওজোন ছিদ্র  বা ওজোন গওহর বলে ।ওজোন স্তর ধংসের জন্য গ্যাসগুলি  হল - ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) ,নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড ( প্রধানত  নাইট্রিক অক্সাইড ,NO)
  ওজোন স্তর ধ্বংসের ক্ষতিকারক প্রভাব :
মানুষের ওপর প্রভাব - চামড়ার ক্যান্সার হতে পারে ,চোখে ছানি পড়তে পারে ,প্রজনন ক্ষমতা কমতে পারে ।
উদ্ভিদের ওপর প্রভাব  - সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া  ব্যাহত হবে ,পাতা বিবর্ণ  হয়ে যাবে ,বীজের অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়া বিগ্নিত হবে ।
বারিমণ্ডলের ওপর প্রভাব  -ফাইটোপ্ল্যাংটন এর সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া কমে  যাবে ,ফলে সামুদ্রিক প্রাণীরা যারা  ফাইটোপ্ল্যাংটন খেয়ে জীবন ধারণ করে তাদের বিনাশ হবে \
জলবায়ুর ওপর প্রভাব  - UV রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্টে পড়লে উষ্নতা বেড়ে যাবে ,জলবায়ুর পরিবর্তন হবে ।
গ্রিনহাউস এফেক্ট এবং বিশ্ব উস্নায়ন :
যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত CO₂,CH₄, N₂O এবং  জলীয় বাস্প  পৃথিবীপৃষ্ট  থেকে বিকিরিত  দীর্ঘ তরঙ্গের অবলোহিত রশ্মির কিছু অংশ শোষণ করে  এবং  বাকি  অংশ  প্রতিফলিত করে ভূপৃষ্ঠ ও তৎসংলগ্ন বায়ু মন্ডলকে ঊত্তপ্ত রাখে এবং জীবকুলের বাঁচার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে  তাকে গ্রিনহাউস এফেক্ট  বলে ।
গ্রীনহাউস গ্যাসগুলি হল - কার্বন -ডাই- অক্সাইড (CO₂) ,মিথেন (CH₄),ক্লোরোফ্লুরোকার্বোন (CFC), ওজোন (O₃),নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O) এবং জলীয় বাস্প । গ্রিনহাউস প্রভাব  সৃষ্টিতে CO₂ এর অবদান  সবচেয়ে  বেশী (50%) |কারণ বায়ুমণ্ডলে  এটি সবচেয়ে  বেশি  পরিমাণে  আছে ।
অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন এই    দুটি  গ্যাস  কোনো  গ্রিনহাউস  প্রভাব  দেখায়  না ।
গ্রীন হাউস প্রভাবের  উপযোগিতা :
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে গ্রীনহাউস গ্যাসগুলি  না থাকলে ভূপৃষ্ট দ্বারা বিকিরিত তাপ মহাশুন্যে চলে যেত । সেক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডলের উষ্নতা  হতো  প্রায়  - 30⁰ C |এই অবস্থায় জীবকুল বেঁচে  থাকতে  পারতো  না ।
বিশ্ব উস্নায়ান বা  গ্লোবাল  ওয়ার্মিং :
পরিবেশ দূষণের ফলে বায়ুমণ্ডলে  গ্রীনহাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ ক্রমশ  বেড়ে  চলেছে । গ্রীনহাউস গ্যাসের প্রভাবে সারা বিশ্ব জুড়ে পৃথিবীর বায়ু মণ্ডলের উষ্নতা  ক্রমশ বেড়ে  চলার  ঘটনাকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে ।বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ গুলি হল - 1. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে CO₂ পরিমান বাড়ছে । 2. ক্রমাগত অরণ্য ছেদনের ফলে CO₂ বাড়ছে । 2. শিল্পায়নের ফলে অন্যান্য গ্রীনহাউস গ্যাস - CFC ,মিথেন  ও নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড  সমূহ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব :,1) পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমশ  বাড়ছে ,   এই শতাব্দীর মাঝামাঝি  2- 4 ⁰C  উষ্নতা বৃদ্ধি  পাবে , ফলস্বরূপ চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিবে ।
2) উষ্নতা বৃদ্ধির  ফলে মেরু অঞ্চলের  বরফ  গলে যাবে  এবং  জলস্ফীতি  দেখা  যাবে , মহা প্লাবন হবে ।
3) উষ্নতা বৃদ্ধি  সহ্য করতে  না  পেরে বহু পতঙ্গ ,পাখি অবলুপ্ত  হবে ।
4) সুপার সাইক্লোন ,টর্নেডো  আরো  ভয়ঙ্কর হবে ।
5) বিশ্ব ব্যাপী ক্রান্তীয় রোগ -যথা ম্যালেরিয়া ,ডেঙ্গু  ইত্যাদির প্রকোপ  বাড়বে ।
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রতিকার :
1) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে  হবে ,বিকল্প শক্তি ,পুনর্নবীকরণ যোগ্য  শক্তির  ব্যবহার  বাড়াতে  হবে । সাইকেল রিক্সা ইত্যাদির ব্যবহার বাড়াতে হবে ।
2) অরণ্য ছেদন   কমাতে  হবে । বনসৃজন করতে  হবে ।
শক্তির যথাযথ ব্যবহার :
শক্তির প্রধান উৎস গুলি  হল - কয়লা ,পেট্রল  ডিজেল ,কেরোসিন ও রান্নার গ্যাস (LPG) প্রভৃতি জীবাশ্ম ।দীর্ঘ দিন  যাবৎ এই শক্তিগুলি ব্যবহারের ফলে এই সম্পদ নিঃষেশসিত হওয়ার পথে ।ভবিষ্যতের কথা ভেবে শক্তির যথাযথ ব্যবহার করা প্রয়াজন ।
তাপন মূল্য :
1 kg ভরের কোনো কঠিন বা তরল জ্বালানির  অথবা STP তে 1 m³ আয়তন বিশিষ্ট কোনো গ্যাসীয় জ্বালানির দহনে যে পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হয় তাকে  ওই জ্বালানির তাপন মূল্য বলে ।
    কয়েকটি  জ্বালানির তাপনমূল্য :
 জ্বালানি  তাপনমূল্য(kJ/kg)  জ্বালানি  তাপনমূল্য(kJ/kg)
 কয়লা (বিভিন্ন প্রকার ) 15000  - 34000
 ডিজেল  44800
কোক
 28000 - 31000
 গ্যাসোলিন  47300
 চারকোল  29600 প্রাকৃতিক গ্যাস  52300
 শুকনো কাঠ  〜17000 বেউটেন  49510
 পেট্রল  48000 হাইড্রোজেন  150000
 LPG  50000  
জীবাশ্মজ্বালানি সংরক্ষণের  প্রয়োজনীতা :
1) যথেচ্ছ  ব্যবহারের ফলে  জীবাশ্ম জ্বালানি  ক্রমে ফুরিয়ে  আসছে  ।
2) জীবাশ্ম জ্বালানি পুনর্নবিকরণযোগ্য নয় । এই গুলি তৈরি  হতে কোটি কোটি  বছর সময়  লাগে ।
3) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমালে উৎপন্ন CO₂ এর পরিমাণ কমবে ,ফলে বিশ্ব উস্ন্যায়নের মাত্রা কমবে ।
4) ভবিস্যত প্রজন্মের কথা ভেবে জীবাশ্ম জ্বালানি সঞ্চয় করা  দরকার ।
স্থিতিশীল উন্নয়ন :
ভবিষৎ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে প্রাকৃতিক সম্পদগুলি  সম্পূর্ণ নিঃশেষিত না  করে যখন  উন্নয়নের স্বার্থে সুনিয়ন্ত্রিত উপায়ে আহরণ ও ব্যবহার করা হয় তখন তাকে স্থিতিশীল উন্নয়ন বলে ।
স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির  ব্যবহার :
স্থিতিশীল  উন্নয়নের জন্য দূষণহীন বিকল্প শক্তির  ব্যবহার  প্রয়োজন । কয়েকটি বিকল্প শক্তি হল - সৌর শক্তি ,বায়ু শক্তি ,জোয়ার-ভাটার শক্তি ,ভূতাপ শক্তি , বিয়োমাস শক্তি  ।
অনবিকরণ যোগ্য শক্তি : যে  সমস্ত  শক্তির  উৎস  ক্ষয়িষ্ণু  এবং যাদের  ভান্ডার সীমিত  তাদের অনবিকরণ যোগ্য শক্তি বলেযেমন -  কয়লা , পেট্রোলিয়াম  ,প্রাকৃতিক গ্যাস  ইত্যাদি  জীবাশ্ম জ্বালানি ।
পুনর্নবীকরণ যোগ্য  শক্তি : যে  সমস্ত  শক্তির উৎস কখনও শেষ  হয়  না ,যাদের  থেকে  বারবার  শক্তি উৎপাদন করা যায় পুনর্নবীকরণ যোগ্য  শক্তির  উৎস বলে । যেমন - সৌর শক্তি ,বায়ু শক্তি  ইত্যাদি ।
সৌরশক্তি :
সৌরশক্তি অচিরাচরিত ও পুনর্নবিকরণ যোগ্য  শক্তির  উৎস । এই শক্তি দূষণ মুক্ত । এই শক্তিকে  বিভিন্ন ভাবে  কাজে  লাগানো যায় । যেমন - সোলার কুকার দ্বারা  রান্না   হয় , সোলার হিটারে  জল গরম করা  যায় , ফোটোভোল্টাইক কোষের দ্বারা  বিদ্যুৎ উৎপাদন করা  যায় ।
                   ফোটোভোল্টাইক কোষ 
        The Future of Solar Energy: A summary and recommendations for ...
          সোলার কুকার 
          Solar Cooker, सोलर कुकर - RB Technology & Energy Solution ...
বায়ুশক্তি :
প্রবাহিত বায়ুর গতিশক্তিকে  কাজে  লাগিয়ে টারবাইনের চাকা ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি  উৎপাদন  করা  যায় । এটিও দূষণ মুক্ত শক্তির উৎস ।বায়ুকলের সাহায্যে  বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন হয় ।
  বায়ুকলের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন 
   Wind Energy | National Geographic Society
জোয়ার- ভাটার  শক্তি :
সমুদ্রের জোয়ার ভাটার  শক্তিকে কাজে  লাগিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে  বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ।
       Tidal Barrage and Tidal Dams Extract Kinetic Energy
ভূ তাপ শক্তি :
আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা উদগীরণ এর  সময় প্রচন্ড গরম ম্যাগমা বেরিয়ে আসে । অর্থাৎ  পৃথিবীর  অভ্যন্তর অনেক  গরম এবং  অভ্যান্তরে  প্রচুর  পরিমানে  তাপ  শক্তি  সঞ্চিত  আছে । এই  অভ্যন্তরীন তাপ শক্তির  সাহায্যে  বিদ্যুৎ  উৎপাদন  করা  যায় । এই  শক্তিকে  বলা  হয় ভূতাপ শক্তি ।শিলাস্তরের ফাঁকে গরম ম্যাগমা আটকা পড়ে  শিলা স্তরকে প্রচণ্ড গরম করে দেয় । ওই শিলাস্তরের সংলগ্নে থাকা জল গরম  হয়ে  বাস্প হয়ে  যায় । এই জলীয় বাস্পকে ভূপৃষ্টে নিয়ে  এসে টারবাইনের সাহায্যে বিদ্যুৎ  উৎপাদন করা যায় ।
  geothermal energy | Description, Uses, History, & Pros and Cons ...

বিয়োমাস শক্তি :
কৃষিজাত বর্জ্য ,পচা গাছপালা , আখের ছিবড়া ,শাকসবজি ,কচুরিপানা ,প্রাণীর মলমূত্র  ইত্যাদি পদার্থগুলোকে একত্রে বিয়োমাস বলে ।  বায়োমাসের মধ্যে  রাসায়নিক শক্তি  আবদ্ধ থাকে , একে  বায়োমাস  শক্তি  বলে ।এটি একটি পুনর্নবীকরণ শক্তি ।
বায়োগ্যাস :
বায়োমাসকে বায়ুর অনুপস্থিতিতে  ব্যাক্টিরিয়ার সাহায্যে বেয়োজিত  করলে  যে  গ্যাসীয়  মিশ্রণ উৎপন্ন হয়  তাকে  জৈব গ্যাস বা বায়োগ্যাস  বলে । বায়োগ্যাসের গ্যাসের প্রধান  উপাদান মিথেন ( 50- 80 %) | বায়োগ্যাস   জ্বালানির কাজে ও আলো জ্বালাতে ব্যবহৃত হয় । বায়োগ্যাসের দ্বারা বিদ্যুৎ ও  উৎপাদন  করা  যায় ।

কয়লা খনির মিথেন :
কয়লা খনিতে কয়লার কঠিন  স্তরে অধিশোষিত মিথেন  গ্যাসই  হল কোলবেড মিথেন ।কয়লার বিভিন্ন স্তরে মিথেন মুক্ত অবস্থায় বা জলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অবস্থায়  থাকে ।এই মিথেন  গ্যাস আহরণের জন্য  দুটি  সম কেন্দ্রিক পাইপ কয়লা স্তর পর্যন্ত প্রবেশ করানো হয় ।একটি পাইপ দিয়ে পাম্প করে জল বের করা হয় । জল বেরিয়ে যাবার পর চাপ হ্রাস পায় ফলে অপর পাইপ দিয়ে মিথেন বেরিয়ে আসে ।
মিথেন হাইড্রেট :
সমুদ্রের তলদেশে পাললিক শিলাস্তরে মিথেন ও জলের অণু  বরফের আকারে জমা থাকে । মিথেন হাইড্রেট এর সংযুক্তি  হল 4 CH₄. 23 H₂O |
বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ):  https://forms.gle/2J8WxyjQUcoPxM219
1.ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য  দায়ী  পদার্থটি  হল  
A) N₂  B) CO₂  C) CFC  D) O₂ 
2. কোনটি গ্রীনহাউস গ্যাস নয় ?
A) CH₄ B)  N₂O  C) N₂  D)  CO₂
  3. কোনটির তাপন মূল্য সবচেয়ে  বেশি ?
A) কাঠ   B)  LPG  C) কয়লা   D)  ডিজেল 
4. নীচের কোন গ্যাসটি  ভূপৃষ্ট থেকে  বিকিরিত দীর্ঘ  তরঙ্গ দৈর্ঘ্য  বিশিষ্ট অবলোহিত  রশ্মি শোষণ করে ?
A) N₂    B) O₂   C) CH₄  D)  He
5. নীচের কোনটি গ্রীনহাউস গ্যাস নয় ?
A) মিথেন   B) জলীয় বাস্প   C)  কার্বন-ডাই-অক্সাইড  D) অক্সিজেন 
6.একটি অচিরাচরিত শক্তির উৎস  হল 
A) পেট্রোল  B) কেরোসিন   C) বায়োগ্যাস   D) কয়লা 
7.প্রতি কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুর উষ্নতা প্রায় 
A) 10⁰ C কমে   B) 6.5⁰ C বাড়ে  C)  6.5⁰ C কমে   D)  10⁰ C বাড়ে 
8. বায়োগ্যাসের  প্রধান উপাদান 
A) মিথেন   B)  হাইড্রোজেন    C) অক্সিজেন   D) এসিটিলিন 
9. কোনটি জীবাশ্ম জ্বালানি নয়  ?
A) কয়লা   B)  ডিজেল   C) সৌরশক্তি   D) পেট্রোল 
10.গ্রিনহাউস গ্যাস হিসাবে পৃথিবীর  উষ্নতা বৃদ্ধির জন্য বেশি দায়ী 
A) N₂O  B)  CH₄  C) CO₂  D) H₂O বাস্প 

Chemical Calculations(রাসায়নিক গণনা)

রাসায়নিক বিক্রিয়া :
যে প্রক্রিয়ায় এক বা একাধিক  পদার্থ পরিবর্তিত  হয়ে  সম্পূর্ণ  ভিন্ন ধৰ্ম বিশিষ্ট  এক বা  একাধিক  পদার্থ  উৎপন্ন  হয়  তাকে রাসায়নিক বিক্রিয়া  বলে।
রাসায়নিক সমীকরণ :
চিহ্ন ও  সংকেতের  সাহায্যে  রাসায়নিক  বিক্রিয়াকে  সংক্ষেপে  প্রকাশ  করার  পদ্ধতিকে  রাসায়নিক  সমীকরণ  বলে ।
       Chemical reaction - Wikipedia
 বিক্রিয়ক পদার্থ : যে পদার্থগুলি রাসায়নিক বিক্রিয়াতে  অংশগ্রহন করে  তাদের  বিক্রিয়ক  পদার্থ  বলে । উপরের বিক্রিয়াতে মিথেন (CH₄) এবং  অক্সিজেন (O₂) হল  বিক্রিয়ক  পদার্থ ।
বিক্রিয়াজাত পদার্থ : রাসায়নিক বিক্রিয়াতে যে  যে  পদার্থ  উৎপন্ন  হয়  তাদের  বিক্রিয়াজাত  পদার্থ  বলে । উপরের বিক্রিয়াতে  কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) এবং জল  (H₂O) হল  বিক্রিয়াজাত  পদার্থ ।
রাসায়নিক সমীকরণের গুরুত্ত্ব :
রাসায়নিক সমীকরণ থেকে গুনগত ও পরিমাণগত অনেক তথ্য  যায় ।
গুনগত তথ্য -  কী কী  পদার্থ  যুক্ত  হয়ে  কী  কী পদার্থ  উৎপন্ন  হয়  তাদের  নাম  সমীকরণ  থেকে  জানা  যায় ।
পরিমাণগত তথ্য  - কী  কী পদার্থ  কত ভাগ  ওজনে যুক্ত হয়ে  কত ভাগ ওজনের  কী  কী  পদার্থ উৎপন্ন  হয়  তা  জানা  যায় ।যদি বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলি গ্যাসীয় হয় তাহলে একই চাপ ও উস্নতায় ওদের আয়তনের অনুপাতও জানা যায় ।
যেমন - N₂ + 3H₂ ⟶ 2NH₃ ;এই  সমীকরণ থেকে  জানা যায় , 1 মোল নাইট্রোজেন  3 মোল  হাইড্রোজেনের সঙ্গে  বিক্রিয়া করে 2 মোল এমোনিয়া উৎপন্ন করে । আরো জানা যায় 2 x 14 =28  গ্রাম  নাইট্রোজেন 3 x 2 = 6 গ্রাম হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে 2 x(  14 +3)  = 34 গ্রাম ভরের এমোনিয়া উৎপন্ন হয় ।এছাড়াও জানা যায় একই চাপ এবং উষ্নতায়  1 আয়তন  নাইট্রোজেন  3 আয়তন  হাইড্রোজেনের সঙ্গে  বিক্রিয়া করে  2 আয়তনের এমোনিয়া উৎপন্ন করে । গ্যাসের আয়তন STP তে মাপা  হলে 22.4 লিটার নাইট্রোজেন, 3 x 22.4 লিটার হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া  করে  2x22.4 লিটার এমোনিয়া উৎপন্ন করে ।
রাসায়নিক বিক্রিয়াতে ভরের সংরক্ষণ :
বিক্রিয়ক পদার্থের মোট  ভরের সঙ্গে  বিক্রিয়াজাত পদার্থের মোট  ভর  সমান  হয় ।
যেমন - C + O₂ ⟶ CO₂ + তাপ  । এই  বিক্রিয়াতে যে তাপ  উৎপন্ন  হয়  তার দরুন আইনস্টাইন এর তত্ব অনুসারে  ভরের সামান্য  হ্রাস  হয় ; কিন্তূ  তা এতই নগণ্য যে  উহা  পরিমাপযোগ্য  নয় ।
গ্যাসীয় পদার্থের আনবিক ভর : 
কোনো  গ্যাসীয়  পদার্থের একটি অণু  একটি  C¹² পরমাণুর ভরের 1/12 অংশের তুলনায় যত গুণ ভারী তাকে  বলে গ্যাসটির আনবিক  ভর ।
গ্যাসের প্রমাণ ঘনত্ব : 
STP তে 1 লিটার  গ্যাসের  গ্রামে  প্রকাশিত ভরকে গ্যাসটির প্রমান ঘনত্ব বলে । হাইড্রোজেনের প্রমাণ ঘনত্ব  = 0.089 g/L 
বাস্প ঘনত্ব :একই চাপ  এবং উষ্নতায়  কোনো  গ্যাসের ভর সম আয়তন হাইড্রোজেন গ্যাসের  তুলনায়  যত গুন্ ভারী তাকে গ্যাসটির বাস্প ঘনত্ব বলে ।
বাস্প ঘনত্ব ও আনবিক ভরের   মধ্যে  সম্পর্ক :
গ্যাসের বাষ্প ঘনত্ব  =  V লিটার  গ্যাসের ভর           ( একই চাপ  ও উষ্নতায় )
                                V লিটার  H₂ গ্যাসের ভর 
                             = গ্যাসের n সংখ্যক  অনুর   ভর (একই  চাপ  ও উষ্নতায়  V লিটার  গ্যাসে n সংখ্যক  অণু  আছে 
                                 n সংখ্যাক  H₂ অণুর ভর 
                             =    গ্যাসের  একটি অণুর  ভর 
                                  1 টি  H ₂ অণুর  ভর 
                            = গ্যাসের  একটি অণুর  ভর
                               দুটি  H পরমাণুর ভর 
                            = 1/2 গ্যাসের আনবিক  ভর ।
∴  গ্যাসটির আনবিক  ভর  =  2 x গ্যাসের  বাষ্প  ঘনত্ব 
প্রমাণ ঘনত্ব ও বাষ্প ঘনত্বের  মধ্যে  সম্পর্ক :
গ্যাসের প্রমাণ  ঘনত্ব   = STP তে 1 L গ্যাসের  ভর 
                                = গ্যাসের  বাষ্প  ঘনত্ব  x H₂ এর  প্রমাণ  ঘনত্ব 
                                 = গ্যাসের  বাস্প ঘনত্ব  x 0.089 ( H₂ এর  প্রমাণ  ঘনত্ব  0.089 g/L )
ওজন ভিত্তিক গণনা :
এক্ষেত্রে  নিম্ন লিখিত  বিষয় গুলি অনুসরণ করা  হয় ।
1) সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক সমতাযুক্ত সমীকরণটি লেখা  হয় ।
2) বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের নীচে প্রয়োজন অনুযায়ী ওদের ভর ,আয়তন  মোল সংখ্যা ইত্যাদি লেখা হয় ।
3) কিছু গ্যাসীয় পদার্থের ক্ষেত্রে ভর  ও আয়তনের  সম্পর্ক  স্থাপনের  জন্য নিমলিখিত  তথ্য গুলি  ব্যবহার করা  হয় ।
a) STP তে যেকোনো  এক  মোল গ্যাসের  আয়তন  = 22.4 লিটার । b) STP তে  এক লিটার  হাইড্রোজেনের ভর = 0.089 গ্রাম । c) STP তে  1 লিটার যে  কোনো  গ্যাসের  আয়তন  = গ্যাসের  বাস্প ঘনত্ব  x 0.089 গ্রাম ।
d) গ্যাসের আনবিক ভর  = 2 x বাষ্প ঘনত্ব ।
ভর সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা :
উদাহরণ 1- 24 g O₂ প্রস্তুত করতে  কত গ্রাম  পটাসিয়াম ক্লোরেট প্রয়োজন হবে ?
⇒ 2KClO₃   ⟶             2KCl + 3O₂ 
2(39+35.5+3x16)=245g             3(2x16) =96 g
সমীকরণ থেকে জানা যায় ,
96 g O₂ প্রস্তুত করতে  245 g  KClO₃ প্রয়োজন ।
ஃ 24 g অক্সিজেন প্রস্তুত করতে  (245x24)/96 = 61.25 g KClO₃ প্রয়োজন ।
উদাহরণ 2:
5 g চুনাপাথরের তাপ বিয়োজনে  উৎপন্ন  চুন  ও CO₂ এর  পরিমাণ নির্ণয়  করো ।
⇒ রাসায়নিক সমীকরণটি , CaCO₃  =  CaO  + CO₂ 
                    CaCO₃  = 40 +12+3x16 =100 g, CaO = 40+16 =56 g ,CO₂ =12+2x16 =44 g 
100 g চুনাপাথর থেকে  চুন পাওয়া যায়  56 g 
5 g থেকে পাওয়া যায়  56 x5/100 = 2.8 g চুন  ।
100 g চুনাপাথর থেকে CO₂ পাওয়া যায়  44 g 
5 g থেকে CO₂ পাওয়া  যাবে 44 x 5/100 = 2.2 g 
উদাহরণ 3: 
STP তে 250 mL গ্যাসের  ওজন  0.1897 g  | হাইড্রোজেনের প্রমান ঘনত্ব  0.0898 g/L |গ্যাসটির বাষ্প ঘনত্ব  ও আনবিক ওজন গণনা করো ।
⇒ STP তে 250 mL গ্যাসের  ওজন  0.1897 g ,
∴ STP তে 1000 mL গ্যাসের  ওজন = 0.1897 x 1000/ 250 = 0.7588 g |
সুতরাং  গ্যাসটির  বাষ্প ঘনত্ব  = 0.7588/0.089 = 8.5
∴ গ্যাসটির  আনবিক  গুরুত্ত্ব  = 2 x বাষ্প ঘনত্ব  = 2 x 8.5 = 17  |
বহু বিকল্প ভিত্তিক  প্রশ্নাবলী (MCQ): https://forms.gle/m8GbHwBmU7cR9r8v8
1. 12 g কার্বনের  দহনের  ফলে  উৎপন্ন  CO₂ এর  পরিমাণ 
A) 32 g  B) 44 g  C)  22 g  D)  28 g 
2. 2 মোল NO এর সঙ্গে অক্সিজেনের  বিক্রিয়ায়  উৎপন্ন NO₂ এর  আয়তন  (STP তে ) 
A) 22.4 L  B) 11.2 L  C) 5.6 L  D) 44.8 L
3. 4 মোল  H₂ এর  সঙ্গে  2 মোল  O₂ এর  বিক্রিয়ায়  উৎপন্ন  স্টিমের  মোল সংখ্যা 
A) 2  B) 4  C) 6  D) 8
4. 12 g কার্বনের দহনের ফলে যে  পরিমান CO₂ উৎপন্ন হয় STP  তে  তার  আয়তন  হবে 
A) 1.2 L  B) 5.6 L  C) 4.8 L  D) 22.4 L
5. STP তে  1 লিটার H₂ এর ওজন হল 
A)   0.089 kg  B) 0.089 g  C) 0.89 g  D) 0.098 kg 
6. STP তে 2 মোল অক্সিজেনের আয়তন 
A) 44.8 লিটার  B) 22.4 লিটার   C) 11.2 লিটার  D) 44.8 মিলি 
7. CH₄ এর আনবিক ওজন  16, বাষ্প ঘনত্ব  হবে  
A) 22.4 B) 8  C) 16  D) 32
8. কার্বনযুক্ত কোনো গ্যাসীয়  পদার্থের বাষ্প  ঘনত্ব  13 হলে ,তার আনবিক  সংকেত  হবে 
A) CO₂  B)  C₂H₄  C) C₂H₆   D) C₂H₂
9.  1 মোল C, 1 মোল O₂ র  সঙ্গে  সম্পূর্ণভাবে বিক্রিয়া করলে  CO ₂ এর কত গুলি  অণু উৎপন্ন  হবে ?
A) 6.022 x 10²³  B) 1.806 x 10²⁴   C) 6.022 x 10²²  D) 6.022 x 10²⁴
10. STP তে  22.4 লিটার  এমোনিয়া এর  ভর  কত ?
A) 34 g  B) 17 g  C) 22.4 g  D) 11.2 g

MCQ for H.S

 1. A chemical cell of emf  E and internal resistance r is connected to a resistance R .The potential difference across R is given by :  A) ...