যে প্রক্রিয়ায় এক বা একাধিক পদার্থ পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধৰ্ম বিশিষ্ট এক বা একাধিক পদার্থ উৎপন্ন হয় তাকে রাসায়নিক বিক্রিয়া বলে।
রাসায়নিক সমীকরণ :
চিহ্ন ও সংকেতের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সংক্ষেপে প্রকাশ করার পদ্ধতিকে রাসায়নিক সমীকরণ বলে ।
চিহ্ন ও সংকেতের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সংক্ষেপে প্রকাশ করার পদ্ধতিকে রাসায়নিক সমীকরণ বলে ।
বিক্রিয়ক পদার্থ : যে পদার্থগুলি রাসায়নিক বিক্রিয়াতে অংশগ্রহন করে তাদের বিক্রিয়ক পদার্থ বলে । উপরের বিক্রিয়াতে মিথেন (CH₄) এবং অক্সিজেন (O₂) হল বিক্রিয়ক পদার্থ ।
বিক্রিয়াজাত পদার্থ : রাসায়নিক বিক্রিয়াতে যে যে পদার্থ উৎপন্ন হয় তাদের বিক্রিয়াজাত পদার্থ বলে । উপরের বিক্রিয়াতে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) এবং জল (H₂O) হল বিক্রিয়াজাত পদার্থ ।
রাসায়নিক সমীকরণের গুরুত্ত্ব :
রাসায়নিক সমীকরণ থেকে গুনগত ও পরিমাণগত অনেক তথ্য যায় ।
গুনগত তথ্য - কী কী পদার্থ যুক্ত হয়ে কী কী পদার্থ উৎপন্ন হয় তাদের নাম সমীকরণ থেকে জানা যায় ।
পরিমাণগত তথ্য - কী কী পদার্থ কত ভাগ ওজনে যুক্ত হয়ে কত ভাগ ওজনের কী কী পদার্থ উৎপন্ন হয় তা জানা যায় ।যদি বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলি গ্যাসীয় হয় তাহলে একই চাপ ও উস্নতায় ওদের আয়তনের অনুপাতও জানা যায় ।
যেমন - N₂ + 3H₂ ⟶ 2NH₃ ;এই সমীকরণ থেকে জানা যায় , 1 মোল নাইট্রোজেন 3 মোল হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে 2 মোল এমোনিয়া উৎপন্ন করে । আরো জানা যায় 2 x 14 =28 গ্রাম নাইট্রোজেন 3 x 2 = 6 গ্রাম হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে 2 x( 14 +3) = 34 গ্রাম ভরের এমোনিয়া উৎপন্ন হয় ।এছাড়াও জানা যায় একই চাপ এবং উষ্নতায় 1 আয়তন নাইট্রোজেন 3 আয়তন হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে 2 আয়তনের এমোনিয়া উৎপন্ন করে । গ্যাসের আয়তন STP তে মাপা হলে 22.4 লিটার নাইট্রোজেন, 3 x 22.4 লিটার হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে 2x22.4 লিটার এমোনিয়া উৎপন্ন করে ।
রাসায়নিক বিক্রিয়াতে ভরের সংরক্ষণ :
বিক্রিয়ক পদার্থের মোট ভরের সঙ্গে বিক্রিয়াজাত পদার্থের মোট ভর সমান হয় ।
যেমন - C + O₂ ⟶ CO₂ + তাপ । এই বিক্রিয়াতে যে তাপ উৎপন্ন হয় তার দরুন আইনস্টাইন এর তত্ব অনুসারে ভরের সামান্য হ্রাস হয় ; কিন্তূ তা এতই নগণ্য যে উহা পরিমাপযোগ্য নয় ।
গ্যাসীয় পদার্থের আনবিক ভর :
কোনো গ্যাসীয় পদার্থের একটি অণু একটি C¹² পরমাণুর ভরের 1/12 অংশের তুলনায় যত গুণ ভারী তাকে বলে গ্যাসটির আনবিক ভর ।
গ্যাসের প্রমাণ ঘনত্ব :
STP তে 1 লিটার গ্যাসের গ্রামে প্রকাশিত ভরকে গ্যাসটির প্রমান ঘনত্ব বলে । হাইড্রোজেনের প্রমাণ ঘনত্ব = 0.089 g/L
বাস্প ঘনত্ব :একই চাপ এবং উষ্নতায় কোনো গ্যাসের ভর সম আয়তন হাইড্রোজেন গ্যাসের তুলনায় যত গুন্ ভারী তাকে গ্যাসটির বাস্প ঘনত্ব বলে ।
বাস্প ঘনত্ব ও আনবিক ভরের মধ্যে সম্পর্ক :
গ্যাসের বাষ্প ঘনত্ব = V লিটার গ্যাসের ভর ( একই চাপ ও উষ্নতায় )
V লিটার H₂ গ্যাসের ভর
= গ্যাসের n সংখ্যক অনুর ভর (একই চাপ ও উষ্নতায় V লিটার গ্যাসে n সংখ্যক অণু আছে
n সংখ্যাক H₂ অণুর ভর
= গ্যাসের একটি অণুর ভর
1 টি H ₂ অণুর ভর
= গ্যাসের একটি অণুর ভর
দুটি H পরমাণুর ভর
= 1/2 গ্যাসের আনবিক ভর ।
∴ গ্যাসটির আনবিক ভর = 2 x গ্যাসের বাষ্প ঘনত্ব
প্রমাণ ঘনত্ব ও বাষ্প ঘনত্বের মধ্যে সম্পর্ক :
গ্যাসের প্রমাণ ঘনত্ব = STP তে 1 L গ্যাসের ভর
গ্যাসের প্রমাণ ঘনত্ব = STP তে 1 L গ্যাসের ভর
= গ্যাসের বাষ্প ঘনত্ব x H₂ এর প্রমাণ ঘনত্ব
= গ্যাসের বাস্প ঘনত্ব x 0.089 ( H₂ এর প্রমাণ ঘনত্ব 0.089 g/L )
ওজন ভিত্তিক গণনা :
এক্ষেত্রে নিম্ন লিখিত বিষয় গুলি অনুসরণ করা হয় ।
1) সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক সমতাযুক্ত সমীকরণটি লেখা হয় ।
2) বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের নীচে প্রয়োজন অনুযায়ী ওদের ভর ,আয়তন মোল সংখ্যা ইত্যাদি লেখা হয় ।
3) কিছু গ্যাসীয় পদার্থের ক্ষেত্রে ভর ও আয়তনের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নিমলিখিত তথ্য গুলি ব্যবহার করা হয় ।
a) STP তে যেকোনো এক মোল গ্যাসের আয়তন = 22.4 লিটার । b) STP তে এক লিটার হাইড্রোজেনের ভর = 0.089 গ্রাম । c) STP তে 1 লিটার যে কোনো গ্যাসের আয়তন = গ্যাসের বাস্প ঘনত্ব x 0.089 গ্রাম ।
d) গ্যাসের আনবিক ভর = 2 x বাষ্প ঘনত্ব ।
ভর সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা :
উদাহরণ 1- 24 g O₂ প্রস্তুত করতে কত গ্রাম পটাসিয়াম ক্লোরেট প্রয়োজন হবে ?
⇒ 2KClO₃ ⟶ 2KCl + 3O₂
2(39+35.5+3x16)=245g 3(2x16) =96 g
সমীকরণ থেকে জানা যায় ,
96 g O₂ প্রস্তুত করতে 245 g KClO₃ প্রয়োজন ।
ஃ 24 g অক্সিজেন প্রস্তুত করতে (245x24)/96 = 61.25 g KClO₃ প্রয়োজন ।
উদাহরণ 2:
5 g চুনাপাথরের তাপ বিয়োজনে উৎপন্ন চুন ও CO₂ এর পরিমাণ নির্ণয় করো ।
⇒ রাসায়নিক সমীকরণটি , CaCO₃ = CaO + CO₂
CaCO₃ = 40 +12+3x16 =100 g, CaO = 40+16 =56 g ,CO₂ =12+2x16 =44 g
100 g চুনাপাথর থেকে চুন পাওয়া যায় 56 g
5 g থেকে পাওয়া যায় 56 x5/100 = 2.8 g চুন ।
100 g চুনাপাথর থেকে CO₂ পাওয়া যায় 44 g
5 g থেকে CO₂ পাওয়া যাবে 44 x 5/100 = 2.2 g
উদাহরণ 3:
STP তে 250 mL গ্যাসের ওজন 0.1897 g | হাইড্রোজেনের প্রমান ঘনত্ব 0.0898 g/L |গ্যাসটির বাষ্প ঘনত্ব ও আনবিক ওজন গণনা করো ।
⇒ STP তে 250 mL গ্যাসের ওজন 0.1897 g ,
∴ STP তে 1000 mL গ্যাসের ওজন = 0.1897 x 1000/ 250 = 0.7588 g |
সুতরাং গ্যাসটির বাষ্প ঘনত্ব = 0.7588/0.089 = 8.5
∴ গ্যাসটির আনবিক গুরুত্ত্ব = 2 x বাষ্প ঘনত্ব = 2 x 8.5 = 17 |
বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ): https://forms.gle/m8GbHwBmU7cR9r8v8
1. 12 g কার্বনের দহনের ফলে উৎপন্ন CO₂ এর পরিমাণ
A) 32 g B) 44 g C) 22 g D) 28 g
2. 2 মোল NO এর সঙ্গে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন NO₂ এর আয়তন (STP তে )
A) 22.4 L B) 11.2 L C) 5.6 L D) 44.8 L
3. 4 মোল H₂ এর সঙ্গে 2 মোল O₂ এর বিক্রিয়ায় উৎপন্ন স্টিমের মোল সংখ্যা
A) 2 B) 4 C) 6 D) 8
4. 12 g কার্বনের দহনের ফলে যে পরিমান CO₂ উৎপন্ন হয় STP তে তার আয়তন হবে
A) 1.2 L B) 5.6 L C) 4.8 L D) 22.4 L
5. STP তে 1 লিটার H₂ এর ওজন হল
A) 0.089 kg B) 0.089 g C) 0.89 g D) 0.098 kg
6. STP তে 2 মোল অক্সিজেনের আয়তন
A) 44.8 লিটার B) 22.4 লিটার C) 11.2 লিটার D) 44.8 মিলি
7. CH₄ এর আনবিক ওজন 16, বাষ্প ঘনত্ব হবে
A) 22.4 B) 8 C) 16 D) 32
8. কার্বনযুক্ত কোনো গ্যাসীয় পদার্থের বাষ্প ঘনত্ব 13 হলে ,তার আনবিক সংকেত হবে
A) CO₂ B) C₂H₄ C) C₂H₆ D) C₂H₂
9. 1 মোল C, 1 মোল O₂ র সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে বিক্রিয়া করলে CO ₂ এর কত গুলি অণু উৎপন্ন হবে ?
A) 6.022 x 10²³ B) 1.806 x 10²⁴ C) 6.022 x 10²² D) 6.022 x 10²⁴
10. STP তে 22.4 লিটার এমোনিয়া এর ভর কত ?
A) 34 g B) 17 g C) 22.4 g D) 11.2 g
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন