শব্দ (Sound)
কোনো স্থিতিস্থাপক বস্তুর কম্পনে শব্দ সৃষ্টি হয় । উৎপন্ন শব্দ জড় মাধ্যমের মধ্যে বিস্তার লাভ করে ।যে জড় বস্তুর কম্পনে শব্দ উৎপন্ন হয় তাকে স্বনক শব্দের উৎস বলে ।শব্দ আমাদের কানে শ্রবনের অনুভূতি সৃষ্টি করে ।
কোনো কম্পনশীল বস্তু থেকে উৎপন্ন যে শক্তি তরঙ্গের আকারে স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে বিস্তারলাভ করে আমাদের কানে এসে শ্রবনের অনুভূতি জাগায় তাকে শব্দ বলে ।
উৎসের কম্পনে শব্দের সৃষ্টি (সুরশলাকার পরীক্ষা ):
সুরশলাকা একটি U আকৃতির ইস্পাতের দন্ড । U এর বাঁকানো অংশে একটি হাতল থাকে ।শোলার বলটিকে সুরশলাকার স্পর্শ করে স্ট্যান্ডের সাহায্যে ঝুলানো থাকে । এর পর রবারের হাতুড়ি দিয়ে সুরশলাকাকে আঘাত করলে শব্দ উৎপন্ন হয় ।শব্দ শোনা যাবে , এবং শোলার বলটি বার বার ছিটকে দূরে যাচ্ছে এবং পুনরায় কাছে আসছে ।এতে প্রমাণিত হয় কম্পনের ফলে শব্দ উৎপন্ন হয় ।
শব্দ বিস্তারের কৌশল : তরঙ্গ
তরঙ্গ - উৎস থেকে উৎপন্ন যে আন্দোলন কোনো জড় মাধ্যমের সাহায্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয় অথচ মাধ্যমের কণাগুলি স্থানচ্যুত হয় না তাকে শব্দ বলে ।
শব্দ এক প্রকারের স্থিতিস্থাপক তরঙ্গ , কারণ এই তরঙ্গ কঠিন , তরল ও গ্যাসীয় প্রভৃতি স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে বিস্তার লাভ করে ।
স্থিতিস্থাপক তরঙ্গ বা যান্ত্রিক তরঙ্গ দুই প্রকার হয় -
1. অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ 2.তীর্যক তরঙ্গ
1.অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ - তরঙ্গ বিস্তার লাভের সময় যদি মাধ্যমের কণা গুলির কম্পন তরঙ্গ গতিবেগের অভিমুখের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে হয় তাহলে তরঙ্গটিকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে ।

স্প্রিংয়ের সঙ্কোচন ও প্রসারণ এক ধরণের অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ । শব্দ কোনো মাধ্যমে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ আকারে বিস্তার লাভ করে ।
2.তীর্যক তরঙ্গ - কোনো স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের কণাগুলির সমষ্টিগত কম্পনের ফলে সৃষ্ট তরঙ্গের বিস্তার লাভের সময় যদি কণাগুলির কম্পন তরঙ্গ গতির অভিমুখের সঙ্গে লম্বভাবে হয় তাহলে তরঙ্গটিকে তীর্যক তরঙ্গ বলে ।

টান করে বাঁধা একটি তারকে সামান্য উপরে টেনে ছেড়ে দিলে তারের মধ্যে তীর্যক তরঙ্গ তৈরি হয় । এছাড়া আলোক তরঙ্গ ,বেতার তরঙ্গ ইত্যাদি হল তীর্যক তরঙ্গ । তবে এইগুলি তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ ,স্থিতিস্থাপক তরঙ্গ নয় ।
শব্দ সম্পর্কিত কয়েকটি রাশির ধারণা :
বিস্তার (Amplitude): কোনো তরঙ্গ মাধ্যমের ভিতর বিস্তার লাভের সময় মাধ্যমের কণাগুলির নিজস্ব অপরিবর্তিত অবস্থান থেকে সর্বচ্চো যে সরণ হয় তাকে ওই তরঙ্গের বিস্তার বলে ।
পর্যায় কাল ( Period) : তরঙ্গের গতিপথের উপর কম্পনশীল কোনো বস্তু কণা একটি পূর্ণ কম্পন বা একটি পূর্ণ তরঙ্গ সৃষ্টি করতে যে সময় লাগে তাকে ওই তরঙ্গের পর্যায়কাল বলে ।
কম্পাঙ্ক (Frequency):
তরঙ্গের গতিপথে অবস্থিত কোনো কণা এক সেকেন্ডে যতগুলি পূর্ণ কম্পন বা যতগুলি পূর্ণ তরঙ্গ সৃষ্টি করে সেই সংখ্যাকে ওই তরঙ্গের কম্পাঙ্ক বলে ।

কম্পাঙ্ক = 1/পর্যায়কাল
কম্পাঙ্কের একক = 1/second = Sec⁻¹ = Hz
তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wave Length): তরঙ্গের উপর অবস্থিত পরপর দুটি সমদশা সম্পন্ন কণার দূরত্বকে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে ।
তির্যক তরঙ্গের ক্ষেত্রে পরপর দুটি তরঙ্গশীর্ষ বা পরপর দুটি তরঙ্গপাদের মধ্যবর্তী দূরত্বকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে ।
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের ক্ষেত্রে পাশাপাশি অবস্থিত একটি ঘনীভবন এবং একটি তনুভবন এর মিলিত দৈর্ঘ্যকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে ।

তরঙ্গবেগ (Wave Velocity):
কোনো মাধ্যমে বিস্তারশীল কোনো তরঙ্গ এক সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গ বেগ বলে ।
তরঙ্গদৈর্ঘ্য ,কম্পাঙ্ক ও তরঙ্গ বেগের মধ্যে সম্পর্ক :
মনে করি কোনো তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য = λ ,কম্পাঙ্ক = n ,তরঙ্গবেগ = v
এখন , এক সেকেন্ডে সৃষ্ট পূর্ণ তরঙ্গের সংখ্যা = n
এক বার পূর্ণ কম্পনে তরঙ্গটি দূরত্ব যায় λ
∴ n বার পূর্ণ কম্পনে দূরত্ব যায় = n λ
n বার পূর্ণ কম্পনে প্রয়োজনীয় সময় এক সেকেন্ড ।
∴ সেকেন্ডে শব্দ দূরত্ব যায় = n λ
⇒ v = n λ
অর্থাৎ তরঙ্গবেগ(v) = কম্পাঙ্ক(n) x তরঙ্গদৈর্ঘ্য( λ )

শব্দের প্রতিফলন (Reflection of Sound):
আলোর মতো শব্দেরও প্রতিফলন হয় , তবে শব্দের প্রতিফলনের জন্য প্রতিফলকের আকার অনেক বড় হওয়া প্রয়োজন , কারণ শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য আলোর চেয়ে অনেক বড় ।শব্দের প্রতিফলনের জন্য প্রতিফলক মসৃণ হওয়ার প্রয়োজন নেই । বড় দেওয়াল ,গাছের সারি ,পাহাড় ইত্যাদি শব্দের প্রতিফলক হিসাবে কাজ করে ।
কোনো কম্পনশীল বস্তু থেকে উৎপন্ন শব্দ যখন এক মাধ্যমএর মধ্য দিয়ে গিয়ে অন্য মাধ্যমের বিভেদতলে আপতিত হয় তখন আপতিত শব্দের কিছু অংশ প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে । এই ঘটনাকে শব্দের প্রতিফলণ বলে । শব্দের প্রতিফলনের সূত্র -
1. আপতিত শব্দ তরঙ্গ ,প্রতিফলিত শব্দ তরঙ্গ এবং আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে থাকে ।
2.প্রতিফলক তলে অবস্থিত আপতন কোণ সর্বদা প্রতিফলণ কোণের সমান হয় ।
শব্দের প্রতিধ্বনি (Echo) : কোনো উৎস থেকে উৎপন্ন শব্দ দূরের কোনো প্রতিফলকে প্রতিফলিত হয়ে মূল শব্দ থেকে পৃথকভাবে শ্রোতার কানে পৌঁছালে ওই প্রতিফলিত শব্দটিকে মূল শব্দের প্রতিধ্বনি বলে ।প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা ও প্রতিফলকের মধ্যে একটি নূন্যতম দূরত্ব থাকা প্রয়োজন ।
শব্দনির্বন্ধ - কোনো শব্দের রেশ বা অনুভূতি যে সময়কাল ধরে মস্তিষ্কে স্থায়ী হয় তাকে শব্দ নির্বন্ধ বলে ।ক্ষনস্থায়ী শব্দ যেমন বন্দুকের শব্দ ,বাজির শব্দ ইত্যাদি শব্দের শব্দ নির্বন্ধ হল 1/10 সেকেন্ড ।
বোধগম্য একমাত্রিক শব্দের শব্দ নির্বন্ধ 1/5 সেকেন্ড , দ্বিমাত্রিক শব্দের শব্দ নির্বন্ধ হল 2/5 সেকেন্ড । ত্রিমাত্রিক শব্দের ক্ষেত্রের 3/5 সেকেন্ড হয় ।এই ভাবে মাত্রা অনুসারে শব্দ নির্বন্ধ বেড়ে যায় ।
ক্ষনস্থায়ী শব্দের ক্ষেত্রের শ্রোতা ও প্ৰতিফলকের নূন্যতম দূরত্ব :
যেহেতু ক্ষণস্থায়ী শব্দের রেশ আমাদের মস্তিষ্কে 1/10 সেকেন্ড স্থায়ী হয় এর প্রতিধ্বনি শুনতে হলে প্রতিফলিত শব্দটিকে 1/10 পরে আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে হবে ।
1/10 সেকেন্ডে শব্দ অতিক্রম করে 1/10 x 332 মিটার ( শব্দের বেগ বায়ুতে 332 মিটার /সেকেন্ড )
= 33.2 মিটার
∴ ক্ষণস্থায়ী শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা (স্বনক ) ও প্রতিফলকের মাঝের দূরত্ব = 33.2 /2 মিটার = 16.6 মিটার ।
পদাংশযুক্ত বোধগম্য শব্দের প্রতিধ্বনি শোনার জন্য শ্রোতা ও প্রতিফলকের মধ্যে নূন্যতম দূরত্ব -
মানুষ এক সেকেন্ডে 5 টির বেশী পদাংশ উচ্চারণ করতে পারে না ।সুতরাং কোনো এক মাত্রিক শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে হলে মূলশব্দ ও প্রতিধ্বনি শোনার মধ্যে সময়ের পার্থ্যক্য যেন 1/5 সেকেন্ডের বেশি হয় ।এখান বায়ুতে শব্দের বেগ 332 মি /সে হলে 1/5 সেকেন্ডে শব্দ অতিক্রম করে 332 x 1/5 মি বা 66.4 মি
অতএব কোনো এক মাত্রিক শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা ও প্রতিফলকের মাঝের দূরত্ব কমপক্ষে 66.4/2 মি বা 33-2 মি হওয়া আবশ্যক ।
দ্বিমাত্রিক শব্দের ক্ষেত্রে এই দূরত্ব হবে33.2মি x 2 = 66.4 মি । ত্রিমাত্রিক শব্দের বেলায় এই দূরত্ব হবে 33.2 মি x 3 = 99.6 মি
শব্দের অনুরনন (Reverberation of Sound):
কোনো শব্দ একাধিক প্রতিফলকে বারবার প্রতিফলিত হয়ে একা ধিক প্রতিধ্বনি শোনা যায় ফলে শব্দের রেশ দীর্ঘ স্থায়ী হয় ,এই ঘটনাকে অনুরণন বলে । বড় ফাঁকা হলঘরে কোনো শব্দ হলে ওই শব্দ দেওয়াল ,সিলিং মেঝে ইত্যাদি থেকে বারবার প্রতিফলিত হয়ে অনুরণন সৃষ্টি করে ।
প্রতিধ্বনির ব্যবহারিক প্রয়োগ :
সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় -

প্রতিধ্বনিকে কাজে লাগিয়ে সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করা যায় ।জাহাজের তলদেশে দুই প্রান্তে একই গভীরতায় একটি প্রেরক যন্ত্র (Transmiter) ও একটি গ্রাহক যন্ত্র (Receiver) বসানো থাকে ।জলে শব্দের বেগ V হলে ট্রান্সমিটার থেকে উৎপন্ন শব্দ গ্রাহক যন্ত্রে পৌঁছেতে T₁ সময় নিলে
D = V xT₁( D = গ্রাহক ও প্রেরক যন্ত্রের মধ্যে দূরত্ব ) অতএব D/2 = V x T₁/2 |
প্রেরক থেকে উৎপন্ন শব্দ তলদেশে প্রতিফলিত হয়ে গ্রাহকে পৌঁছাতে T₂ সময় নিলে ,উপরে অঙ্কিত সমকোণী ত্রিভুজের অতিভূজ এর দৈর্ঘ্য হবে Vx T₂/2.
অতএব সমুদ্রের গভীরতা = উৎসের গভীরতা (h ) + সমকোণী ত্রিভুজটির লম্বের দৈর্ঘ্য
= h + V/2 √(T₂² - T₁²)
শ্রুতিগোচর শব্দ :
শব্দের উৎসের কম্পাঙ্ক 20 Hzথেকে 20000 Hz মধ্যে থাকলে সেই শব্দ আমরা শুনতে পাই ।এই শব্দকে বলা হয় শ্রুতিগোচর শব্দ ।
শ্রবণেতর তরঙ্গ (Infrasonic Sound):
কোনো শব্দের কম্পাঙ্ক 20 Hz এর কম হলে সেই শব্দ আমরা শুনতে পাই না এবং সেই শব্দকে শ্রবণেতর তরঙ্গ বা শব্দেতর তরঙ্গ বলে ।
শ্রবণোত্তর তরঙ্গ (Ultra Sound):
যে শব্দের কম্পাঙ্ক 20000 Hz এর বেশি তাকে শ্রবণোত্তর তরঙ্গ বা শব্দোত্তর তরঙ্গ বলে । এই তরঙ্গ আমরা শুনতে পাই না ।
শ্রবণোত্তর তরঙ্গ এর ব্যবহারিক প্রয়োগ :
আলট্রাসোনোগ্রাফি -
এই শব্দ তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে মানুষের শরীরের ভিতরের বৃক্ক,লিভার ইত্যাদি অঙ্গ সম্পর্কে অবগত হওয়া যায় ।ডাক্তারী বিদ্যায় একে আলট্রাসোনোগ্রাফি বলে । আলট্রাসোনোগ্রাফি রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে ।
জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস - শ্রবণোত্তর তরঙ্গ দ্বারা জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা যায় । এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে দুধ সংরক্ষণ করা যায় ।
বাদুড় ও তিমি মাছের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ : বাদুড় ও তিমি মাছ শব্দোত্তর তরঙ্গ উৎপন্ন করে । এই তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে তারা শিকার করে ।বাদুড় 20000 Hz থেকে 75000 Hz কম্পাঙ্কের শব্দ তৈরি করে । এই শব্দ দূরের কোনো শিকারে প্রতিফলিত হয়ে ফায়ার আসে । এই প্রতিধ্বনি এর সাহায্যে শিকারের গতিবিধি জানতে পারে ।
সোনার (SONAR): SONAR শব্দটির পুরো নাম হল -Sound Navigation And Ranging ।এটি একটি যন্ত্র যার সাহায্যে শব্দোত্তর তরঙ্গ সৃষ্টি করে এবং শব্দের প্রতিফলনের সাহায্যে সমুদ্রাজলের মধ্যে ডুবে থাকা বস্তু যথা জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ,সাবমেরিন ডুবোপাহাড়ের অস্তিত্ব জানা যায় ।

এই যন্ত্রের দুটি অংশ । একটি হল প্রেরক (Transmitter) অপরটি হল গ্রাহক যন্ত্র (Receiver) | যন্ত্রটি জাহাজের তলদেশে থাকে ।প্রেরক শব্দোত্তর তরঙ্গ সৃষ্টি করে সমুদ্র জলের মধ্যে পাঠায় । জলের তলদেশ থেকে প্রতিফলিত হয়ে গ্রাহক যন্ত্রে আসে । মূল শব্দ ও প্রতিধ্বনি এর মধ্যে সময়ের পার্থক্য সোনার যন্ত্রে ধরা পড়ে । সমুদ্র জলে শব্দের বেগ এবং এই সময় থেকে গভীরতা নির্ণয় করা যায় ।
শব্দের বৈশিষ্ট্য (Characteristic of Sound} :
শব্দের মধ্যে এক বা একাধিক কম্পাঙ্ক মিশে থাকতে পারে ।
সুর(Tone) :একটি মাত্র কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট শব্দকে সুর বলে । যেমন সুরশলাকার শব্দ ।
স্বর (Note) : যে সুরযুক্ত শব্দের মধ্যে একাধিক কম্পাঙ্ক মিশে থাকে তাকে স্বর বলে । স্বর হলো কতকগুলি সুরের মিশ্রণ ।যেমন - বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র থেকে উৎপন্ন শব্দ , সেতার এসরাজ ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন শব্দ ।
|
|
|
|
|
|
|
|
Note

মূলসুর ,উপসূর ,সামমেল ও অষ্টক :
মূলসুর(Fundamental tone) :
কোনো স্বরের মধ্যে যে সুরটির কম্পাঙ্ক সবচেয়ে কম সেই কম্পাঙ্কের শব্দকে মূলসুর বলে ।
উপসূর :
স্বরের মধ্যে উপস্থিত মূলসুর ছাড়া অন্যান্য কম্পাঙ্কের সুরগুলিকে উপসূর বলে ।
সমমেল (Harmonics):
স্বরের মধ্যে উপস্থিত যে সকল উপসূরের কম্পাঙ্ক মূলসুরের কম্পাঙ্কের সরল গুণিতক তাদের সমমেল বলে ।
অষ্টক(Octave) :
কোনো একটি সুরের কম্পাঙ্ক অন্য একটি সুরের কম্পাঙ্কের দ্বিগুন হলে প্রথম সুরটিকে দ্বিতীয় সুরের অষ্টক বলে ।

সকল সমমেল উপসূর কিন্তু সমস্ত উপসূর সমমেল নয় -মনে করি কোনো স্বরের মধ্যে 250 Hz,300 Hz,500 Hz,750 Hz কম্পাঙ্কগুলি আছে । এদের মধ্যে 250 Hz হল মূলসুর , অন্যান্য সব কম্পাঙ্কগুলি উপসূর । ,500 Hz,750 Hz কম্পাঙ্কের শব্দগুলি সমমেল ,কিন্তু 300 Hz কম্পাঙ্কের শব্দটি উপসূর কিন্তু সমমেল নয় ,কারণ এটি 250 এর সরল গুণিতক নয় ।সুতরাং সমস্ত সমমেল উপসূর কিন্তু সমস্ত উপসূর সমমেল নয় ।
শব্দ শোনার অনুভূতি অনুযায়ী শব্দের শ্রেণী বিভাগ :
শোনার অনুভূতি অনুসারে শব্দ দুভাগে ভাগ করা যায় । 1. সুরযুক্ত শব্দ এবং 2. সুরবর্জিত শব্দ ।
1.সুরযুক্ত শব্দ(Musical sound) :
উৎসের বা স্বনকের নিয়মিত ও পর্যাবৃত্ত কম্পনের ফলে উৎপন্ন দীর্ঘস্থায়ী শ্রুতিমধুর শব্দকে সুরযুক্ত শব্দ বলে ।সঙ্গীতের ও বাদ্যযন্ত্রের শব্দ ।
2.সুরবর্জিত শব্দ (Noise):
স্বনকের ক্ষনস্থায়ী এবং অনিয়মিত কম্পনের ফলে যে শ্রুতিকটু শব্দ উৎপন্ন হয় তাকে সুরবর্জিত শব্দ বলে । যেমন - বাজীর শব্দ , গুলির আওয়াজ ইত্যাদি ।
সুরযুক্ত শব্দের বৈশিষ্ট্য (Characteristic of Musical Sound):
সুরযুক্ত শব্দের তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে । 1.প্রাবল্য (Loudness ) 2.তীক্ষ্নতা (Pitch ) 3. গুণ বা জাতি ( Quality)
1..প্রাবল্য (Loudness ) ;
শব্দ কতটা জোরে আমাদের কানে এসে পৌঁছায় তা প্রাবল্যের দ্বারা বোঝানো হয় ।এটি একটি অনুভূতি যা পরিমাপ যোগ্য নয় । কিন্তু তীব্রতা একটি পরিমাপযোগ্য রাশি । তীব্রতার সঙ্গে প্রাবল্যের সমানুপাতিক সম্পর্ক ।শব্দ বিস্তারের অভিমুখের সঙ্গে লম্বভাবে রক্ষিত একক ক্ষেত্রফলের মধ্যে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ শব্দ শক্তি প্রবাহিত হয় তাকে ওই শব্দের তীব্রতা বলে ।তীব্রতার একক ডেসিবেল (dB )। এছাড়া বেল ও তীব্রতার একক |1dB = 0.1 bel.সুরযুক্ত ও সুরবর্জিত উভয় প্রকার শব্দের প্রাবল্য আছে ।
শব্দের প্রাবল্য বা তীব্রতা নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে :
i) স্বণকের আকার -স্বণকের আকার যত বড় হয় উৎপন্ন শব্দের প্রাবল্য তত বেশি হয় ।
ii) স্বণক ও শ্রোতার মধ্য দূরত্ব - শব্দের প্রাবল্য বা তীব্রতা স্বণক ও শ্রোতার মধ্য দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তনুপাতিক ।
iii) স্বণকের কম্পনের বিস্তার - প্রাবল্য বা তীব্রতা কম্পনের বিস্তারের(Amplitude) বর্গের সমানুপাতিক ।
iv) অনুনাদী বস্তুর উপস্থিতি - স্বণকের নিকটে অনুনাদী বস্তু থাকলে বস্তুটির মধ্যে পরবশ কম্পনের সৃষ্টি হয় । ফলে শব্দের প্রাবল্য বাড়ে ।এই জন্য সেটার সেতার , গীটার ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রে ফাঁপা কাঠের বাস্কের উপর টানকরা তার লাগানো থাকে । তারের কম্পনের ফলে বাস্কের ভিতরের বাতাসে পরবশ কম্পনের সৃষ্টি হয় এবং শব্দ জোরালো শোনা যায় ।
মাধ্যমের ঘনত্ব - শব্দ যে মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে যায় তার ঘনত্ব বেশি হলে শব্দের প্রাবল্য বাড়ে ।
2,তীক্ষ্নতা (Pitch):
সুরযুক্ত শব্দের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল তীক্ষ্নতা । ইহা কম্পাঙ্কের উপর নির্ভরশীল একটি বৈশিষ্ট্য ।শব্দের কম্পাঙ্ক বেশি হলে তীক্ষ্নতাও বেশি হয় ।সুরযুক্ত শব্দের যে বৈশিষ্ট্যের জন্য চড়া ও খাদের সুরের মধ্যে পার্থক্য করা যায় তাকে শব্দের তীক্ষ্নতা বলে ।
সুরযুক্ত শব্দের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল তীক্ষ্নতা । ইহা কম্পাঙ্কের উপর নির্ভরশীল একটি বৈশিষ্ট্য ।শব্দের কম্পাঙ্ক বেশি হলে তীক্ষ্নতাও বেশি হয় ।সুরযুক্ত শব্দের যে বৈশিষ্ট্যের জন্য চড়া ও খাদের সুরের মধ্যে পার্থক্য করা যায় তাকে শব্দের তীক্ষ্নতা বলে ।
3.গুণ বা জাতি (Quality):
শব্দের যে বৈশিষ্ট্যের জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপন্ন একই প্রাবল্য ও তীক্ষ্নতা বিশিষ্ট শব্দ গুলির মধ্যে পার্থক্য করা যায় তাকে শব্দের গুণ বা জাতি বলে ।
একটি বাদ্যযন্ত্র থেকে উৎপন্ন শব্দের গুণ বা জাতি নির্ভর করে ,মূলসুরের সঙ্গে থাকা উপসূরের সংখ্যার উপর ,উপাসুরগুলির কম্পাঙ্কের অনুপাতের উপর এবং উপসুরগুলির আপেক্ষিক প্রাবল্যের উপর ।
শব্দ দূষণ (Sound Pollution):
শ্রবণেন্দ্রিয়ের সহনশীলতার অধিক কম্পাঙ্কের ও অধিক প্রাবল্যের শব্দ বা কোলাহলের বৃদ্ধি পাওয়াকে শব্দ দূষণ বলে ।শব্দের তীব্রতা 65 dB এর বেশি হলে শব্দ দূষণ হয় । মানুষ 85 dB থেকে 90 dB পর্যন্ত তীব্রতার শব্দ সহ্য করতে পারে ।WHO নির্দেশিত নিরাপদ তীব্রতা মাত্রা হল 45 dB |
শব্দ দূষণের উৎস মোটামুটি চার রকমের হয় । 1. যানবাহনের জন্য শব্দদূষণ 2. বিভিন্ন কলকারখানা থেকে যন্ত্রপাতির থেকে উৎপন্ন শব্দ দূষণ 3. সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে শব্দ দূষণ 4. নিকটবর্তী শব্দ দূষণ ।
শব্দ দূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব :
1. শ্রবণেন্দ্রিয়র ক্ষতি - 90 dB মাত্রার কাছাকাছি শব্দ কানের অবসাদ সৃষ্টি করে । অতি প্রাবল্যের শব্দ (1OO dB) মানুষকে বধির করে দিতে পারে ।
2.শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি - শব্দ দূষণ বিরক্তি উৎপাদন করে , মানুষ ক্লান্তি ও অবসাদে ভুগে এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় ।শব্দ দূষণের ফলে হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় ।
শব্দ দূষণের প্রতিকার (Remedial measures to curb sound pollution):
শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সম্ভাব্য ব্যবস্থাগুলি হল -
i) আইনি ব্যবস্থা : আইন করে 65 ডেসিবেলের বেশি তীব্রতর শব্দ উৎপাদন নিষিদ্ধ করতে হবে । হাসপাতাল ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিকট গাড়ির হর্ন ,মাইক ইত্যাদি বাজানো নিষিদ্ধ করতে হবে ।
ii) শব্দ শোষক ব্যবহার : ইয়ার প্লাগ ,নয়েজ হেলমেট ও মোম মাখানো তুলো ইত্যাদি ব্যবহার করে শব্দের তীব্রতা কমানো যায় ।
iii) অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ : বেশি শব্দ সৃষ্টিকারী ইঞ্জিনগুলিতে সাইলেন্সার ব্যবহার করতে হবে বা অত্যাধুনিক শব্দ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র তৈরি করতে হবে ।
iv) গাছপালা - গাছপালা শব্দ শোষক হিসাবে কাজ করে ,তাই রাস্তার দুপাশে গাছ লাগিয়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।
v) জনশিক্ষা : শব্দ দূষণের কুফল সম্পর্কে টিভি , খবরের কাগজ ইত্যাদির মাধ্যমের সাহায্যে জনসচেতনা গড়ে তুলতে হবে ।
অনুশীলনী :
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন কর (MCQ): https://forms.gle/r1jAqvSRGeBxJveH6
1.নিম্নলিখিত কোন মাধ্যমটির মধ্য দিয়ে শব্দ বিস্তার লাভ করতে পারে না ?
a) কঠিন মাধ্যম b) তরল মাধ্যম c) গ্যাসীয় মাধ্যম d) শূন্য মাধ্যম
2.ক্ষণস্থায়ী শব্দের শ্রুতি নির্বন্ধের সময় কাল হল -
a) 0.05 sec b) 0.15 sec c) 0.1 sec d) 0.2 sec
3.বস্তুর কম্পনে সৃষ্ট হয় -
a) চুম্বক b) বিদ্যুৎ c) আলো d) শব্দ
4. শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক হল --
a) জুল b) হার্টজ c) নিউটন d) বেল
5.আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ব্যবহৃত হয় -
a) শব্দেতর শব্দ তরঙ্গ b) শব্দোত্তর শব্দ তরঙ্গ c) আলোক তরঙ্গ d) কোনোটিই নয়
6. SI পদ্ধতিতে শব্দের তীব্রতার একক --
a) N/m² b) J/m c)Jm² d) W/m²
7. WHO নির্দেশিত শব্দের নিরাপদ তীব্রতার মাত্রা কত ?
a) 45 dB b) 60 dB c) 85 dB d) 30 dB
8.কম্পাঙ্কের একক হল -
a) ডেসিবেল b) সেন্টিমিটার c) সেমি/সেকেন্ড d) হার্ৎজ
9.ক্ষণস্থায়ী শব্দের প্রতিধ্বনি শোনার জন্য প্রতিফলক ও শ্রোতার মধ্যে দূরত্ব হওয়া উচিত -
a) 664 মি b) 33.2 মি c) 332 মি d) 16.6 মি
10.শ্রুতিগোচর শব্দেরকম্পাঙ্কের পাল্লা হল -
a) 20 Hz কম b) 20000 Hz এর বেশি c) 20 - 20000 Hz d) 50 - 50000 Hz
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন