পরমাণুর নিউক্লিয়াস (Atomic Nucleus):
তেজস্ক্রিয়তা ( Radioactivity)
ইউরেনিয়াম ,রেডিয়াম ও থোরিয়াম ইত্যাদি কতকগুলি ভারী মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে সতস্ফুর্তভাবে এক অদৃশ্য রশ্মি নির্গত হয় যা বাহিরের তাপ ,চাপ ,উষ্নতা ও রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রভৃতি কোনো কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হয় না তাকে তেজস্ক্রিয়তা বলে । যে মৌলগুলি এই রশ্মি বিকিরণ করে তাদের তেজস্ক্রিয় মৌল বলে ।নির্গত রশ্মিকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি(Radioactive Rays) বলে ।

α,β ও γ রশ্মির প্রকৃতি ( Nature of α,β and γ rays):
তেজস্ক্রিয় রশ্মির গতিপথে তড়িৎক্ষেত্র বা চুম্বকক্ষেত্র স্থাপন করলে এটি তিনটি রশ্মিতে বিভক্ত হয়ে যায় । যথা
1) একটি অংশ তড়িৎ ক্ষেত্রের ঋণাত্মক মেরুর দিকে হেলে অগ্রসর হয় । এটিকে আলফা রশ্মি (α ray) বলে ।
2) দ্বিতীয় অংশটি তড়িৎক্ষেত্রের ধনাত্মক মেরুর দিকে হেলে অগ্রসর হয় । এটিকে বিটারশ্মি (β ray) বলে ।
3) তৃতীয় অংশটি কোনো প্রকারে বিক্ষিপ্ত না হয়ে সোজা বেরিয়ে যায় । এই অংশটিকে গামা রশ্মি (γ ray) বলে ।

1) আলফারশ্মি (α ray):
আলফা রশ্মি ধনাত্মক আধানযুক্ত হিলিয়াম পরমাণু ( ₄He⁺²)| এর ভর 4 একক ( হিলিয়াম পরমাণুর ভর )। আলফা কণার ভর বেশী ও বেগ কম হওয়ায় ভেদন ক্ষমতা কম । এই রশ্মি ০.১ মিমি অ্যালুমিনিয়াম পাত দ্বারা শোষিত হয় । গ্যাসীয় মাধ্যমে যাওয়ার সময় গ্যাসীয় পদার্থের পরমাণু থেকে ইলেক্ট্রন বিচ্ছিন্ন করে গ্যাসকে আয়নিত করে । গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা আলফা কণার সবচেয়ে বেশী । গতিবেগ কম ( আলোর গতিবেগের চেয়ে কম )।
2) বিটা রশ্মি (β রশ্মি ):
বিটা রশ্মি ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেক্ট্রনের প্রবাহ ।(e₋₁) বিটা কণার ভর ইলেক্ট্রনের ভরের সমান । ভর নগন্য ও গতিবেগ উচ্চ হওয়ায় ভেদ ক্ষমতা বেশী হয় । এই রশ্মি প্রায় ৫ মিমি অ্যালুমিনিয়াম পাত ভেদ করতে পারে ।গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা কম ( আলফা কণার ১০০ ভাগের ১ ভাগ )। গতিবেগ আলোর বেগের চেয়ে কম । আলফা রশ্মির বেগের চেয়ে বেশী ।
3) গাম্মারশ্মি ( γ ray) :
এটি অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ । এটি আধান শূন্য অর্থাৎ নিস্তড়িৎ । এর ভর নেই । গামা রশ্মির ভেদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশী ।এটি ৮ সেমি পুরু অ্যালুমিনিয়াম পাত ভেদ করতে পারে । এর গতিবেগ সবচেয়ে বেশী এবং আলোর গতিবেগের সমান ।
তেজস্ক্রিয় রশ্মির উৎস ( Origin of radioactive ray):
তেজস্ক্রিয় রশ্মির উৎস হল পরমাণুর নিউক্লিয়াস । পরমাণুর নিউক্লিয়াস খুব ভারী হলে অর্থাৎ প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার পার্থক্য খুব বেশি হলে নিউক্লিয়াস থেকে সতঃস্ফুর্ত ভাবে α,β ও γ রশ্মি নির্গত হয় । α,β কখনই একই সঙ্গে নির্গত হয় না । α,β কণা নির্গমনের ফলে নুতন নিউক্লিয়াস গঠিত হয় । α বা β কণা নির্গমনের ফলে নিউক্লিয়াসে অতিরিক্ত শক্তি উৎপন্ন হয় । এই অতিরিক্ত শক্তি তরঙ্গের আকারে গামা রশ্মি হিসাবে বেরিয়ে আসে ।
α বা β কণা নির্গমনের ফলে নূতন মৌল সৃষ্টি হয় । একটি আলফা কণা নির্গমনের ফলে পরমাণু ক্রমাঙ্ক +২ একক এবং ভরসংখ্যা ৪ একক হ্রাস পায় ।
₉₂U²³⁸➝ ₉₀Th ²³⁴ + ₂α⁴
বিটা কণা নির্গমনের ফলে ভরসংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না । কিন্তূ পারমাণবিক সংখ্যা ১ একক বৃদ্ধি পায় ।
₉₀Th ²³⁴ ⟶ ₉₁Pa²³⁴ + β( ₋₁eº )
গামা রশ্মি নির্গমনের ফলে ভরসংখ্যা ও পারমানবিক সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না ।
₉₀Th²³⁰⇢ ₉₀Th²³⁰ + ₀γ⁰
নিউক্লিও শক্তি (Nuclear Energy):
ভরবিচ্যুতি বা ভর ত্রুটি ( Mass defect) : নিউক্লিয়াসের স্থির ভর(M ) নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রিনগুলির মোট ভরের থেকে কম হয় ।ভরের এই হ্রাস বা ত্রুটিকে ভরত্রুটি (Δm) বলে ।
ধরা যাক , কোনো মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা Z , ভরসংখ্যা A
∴ প্রোটন সংখ্যা = Z , নিউট্রন সংখ্যা = A - Z
যদি একটি প্রোটনের ভর mр এবং একটি নিউট্রনের ভর mη হয় তাহলে পারমাণুটির ভর = Z mр + (A - Z)mη ,পরমাণুটির প্রকৃত ভর ( পরীক্ষালন্ধ ভর ) M হলে
ভরবিচ্যুতি ( Δm) = [ Z mр + (A - Z) mη] - M
নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি ( Nuclear binding energy):
নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রনগুলির ভর হ্রাসের ফলে উদ্ভুত যে বিশেষ শক্তির দ্বারা নিউক্লিয়নগুলিকে একসঙ্গে ঠাসাঠাসি ভাবে আবদ্ধ রাখে তাকে নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি বলে । ভরহ্রাস Δm হলে বন্ধনশক্তি হবে
ΔE = Δm c² |
অন্যভাবে বলা যায় নিউক্লিয়াসকে ভেঙে ওর নিউক্লিয়ন গুলিকে পরস্পর থেকে বিছিন্ন করে স্বাধীন কণা হিসাবে অলাদা করতে যে শক্তির প্রয়োজন হয় তাকে বন্ধন শক্তি বলে ।
নিউক্লিয় বিভাজন (Nuclear fission) :
যে বিভাজনে কোনো ভারী নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়ে মোটামুটি দুটি কাছাকাছি ভরের নিউক্লিয়াস উৎপন্ন হয় এবং তারসঙ্গে কয়েকটি নিউট্রন কণিকা এবং প্রচুর পরিমানে শক্তি নির্গত হয় তাকে নিউক্লিয় বিভাজন বলে ।

₉₂U²³⁵ কে নিউট্রন কণিকা ( ₀n¹ ) দ্বারা আঘাত করলে প্রায় দুটি সম ভরের নিউক্লিয়াস ও তিনটি উচ্চ শক্তি সম্পন্ন নিউট্রন ও প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয় । নিচের সমীকরণের সাহায্যে দেখানো হল ।
₉₂U²³⁵ + ₀n¹ ⟶ ₉₂U²³⁶⟶ ₅₆Ba¹⁴¹ + ₃₆Kr⁹² + 3₀n¹ +শক্তি
এখানে শক্তির উৎস হল ভরত্রুটি(mass defect), উৎপন্ন নিউক্লিয়াস গুলির (₅₆Ba¹⁴¹ ,₃₆Kr⁹² ) ভর ও তিনটি নিউট্রনের ভরের সমষ্টি টার্গেট নিউক্লিয়াস (₉₂U²³⁵)ও আঘাতকারী কণা (নিউট্রন) এর মোট ভরের থেকে কম হয় ।এই ভর পার্থক্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
নিউক্লিও সংযোজন (Nuclear fusion) :

যখন অতি উচ্চ তাপমাত্রায় দুটি হালকা নিউক্লিয়াস একত্রে যুক্ত হয়ে একটি ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং প্রচুর পরিমান শক্তি উৎপন্ন করে সেই নিউক্লিও বিক্রিয়াকে নিউক্লিও সংযোজন বিক্রিয়া বলে । এখানে শক্তি নির্গমনের কারণ হল ভারী নিউক্লিয়াসটির ভর হালকা নিউক্লিয়াস দুটির মোট ভরের থেকে সামান্য কম হয় । এই ভর পার্থক্য আইনস্টাইনের E = m c² সমীকরণ অনুযায়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
ইহা নিউক্লিও বিভাজনের বিপরীত বিক্রিয়া । এই ধরনের বিক্রিয়া নক্ষত্রের অভ্যন্তরে ঘটে কারণ ইহা ঘটার জন্য অতি উচ্চ তাপমাত্রা আবশ্যক ।
চিত্রের নিউক্লিও সংযোজন বিক্রিয়াটি নিম্নলিখিত ভাবে লেখা যায় -
₁H³ + ₁H² ⟶ ₂He⁴ + ₀n¹ +শক্তি
নিউক্লিও বিভাজনের ব্যবহারিক প্রয়োগ :
এই নীতির সাহায্যে পরমাণু বোমা তৈরি করা যায় । বিভাজন বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত করে পরমাণু চুল্লি তৈরী করা হয় । এই পরমাণু চুল্লি থেকে বিদ্যুৎউৎপাদন করা যায় ।
তেজস্ক্রিয়তা ( Radioactivity)
ইউরেনিয়াম ,রেডিয়াম ও থোরিয়াম ইত্যাদি কতকগুলি ভারী মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে সতস্ফুর্তভাবে এক অদৃশ্য রশ্মি নির্গত হয় যা বাহিরের তাপ ,চাপ ,উষ্নতা ও রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রভৃতি কোনো কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হয় না তাকে তেজস্ক্রিয়তা বলে । যে মৌলগুলি এই রশ্মি বিকিরণ করে তাদের তেজস্ক্রিয় মৌল বলে ।নির্গত রশ্মিকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি(Radioactive Rays) বলে ।
α,β ও γ রশ্মির প্রকৃতি ( Nature of α,β and γ rays):
তেজস্ক্রিয় রশ্মির গতিপথে তড়িৎক্ষেত্র বা চুম্বকক্ষেত্র স্থাপন করলে এটি তিনটি রশ্মিতে বিভক্ত হয়ে যায় । যথা
1) একটি অংশ তড়িৎ ক্ষেত্রের ঋণাত্মক মেরুর দিকে হেলে অগ্রসর হয় । এটিকে আলফা রশ্মি (α ray) বলে ।
2) দ্বিতীয় অংশটি তড়িৎক্ষেত্রের ধনাত্মক মেরুর দিকে হেলে অগ্রসর হয় । এটিকে বিটারশ্মি (β ray) বলে ।
3) তৃতীয় অংশটি কোনো প্রকারে বিক্ষিপ্ত না হয়ে সোজা বেরিয়ে যায় । এই অংশটিকে গামা রশ্মি (γ ray) বলে ।
1) আলফারশ্মি (α ray):
আলফা রশ্মি ধনাত্মক আধানযুক্ত হিলিয়াম পরমাণু ( ₄He⁺²)| এর ভর 4 একক ( হিলিয়াম পরমাণুর ভর )। আলফা কণার ভর বেশী ও বেগ কম হওয়ায় ভেদন ক্ষমতা কম । এই রশ্মি ০.১ মিমি অ্যালুমিনিয়াম পাত দ্বারা শোষিত হয় । গ্যাসীয় মাধ্যমে যাওয়ার সময় গ্যাসীয় পদার্থের পরমাণু থেকে ইলেক্ট্রন বিচ্ছিন্ন করে গ্যাসকে আয়নিত করে । গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা আলফা কণার সবচেয়ে বেশী । গতিবেগ কম ( আলোর গতিবেগের চেয়ে কম )।
2) বিটা রশ্মি (β রশ্মি ):
বিটা রশ্মি ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেক্ট্রনের প্রবাহ ।(e₋₁) বিটা কণার ভর ইলেক্ট্রনের ভরের সমান । ভর নগন্য ও গতিবেগ উচ্চ হওয়ায় ভেদ ক্ষমতা বেশী হয় । এই রশ্মি প্রায় ৫ মিমি অ্যালুমিনিয়াম পাত ভেদ করতে পারে ।গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা কম ( আলফা কণার ১০০ ভাগের ১ ভাগ )। গতিবেগ আলোর বেগের চেয়ে কম । আলফা রশ্মির বেগের চেয়ে বেশী ।
3) গাম্মারশ্মি ( γ ray) :
এটি অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ । এটি আধান শূন্য অর্থাৎ নিস্তড়িৎ । এর ভর নেই । গামা রশ্মির ভেদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশী ।এটি ৮ সেমি পুরু অ্যালুমিনিয়াম পাত ভেদ করতে পারে । এর গতিবেগ সবচেয়ে বেশী এবং আলোর গতিবেগের সমান ।
তেজস্ক্রিয় রশ্মির উৎস ( Origin of radioactive ray):
তেজস্ক্রিয় রশ্মির উৎস হল পরমাণুর নিউক্লিয়াস । পরমাণুর নিউক্লিয়াস খুব ভারী হলে অর্থাৎ প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার পার্থক্য খুব বেশি হলে নিউক্লিয়াস থেকে সতঃস্ফুর্ত ভাবে α,β ও γ রশ্মি নির্গত হয় । α,β কখনই একই সঙ্গে নির্গত হয় না । α,β কণা নির্গমনের ফলে নুতন নিউক্লিয়াস গঠিত হয় । α বা β কণা নির্গমনের ফলে নিউক্লিয়াসে অতিরিক্ত শক্তি উৎপন্ন হয় । এই অতিরিক্ত শক্তি তরঙ্গের আকারে গামা রশ্মি হিসাবে বেরিয়ে আসে ।
α বা β কণা নির্গমনের ফলে নূতন মৌল সৃষ্টি হয় । একটি আলফা কণা নির্গমনের ফলে পরমাণু ক্রমাঙ্ক +২ একক এবং ভরসংখ্যা ৪ একক হ্রাস পায় ।
₉₂U²³⁸➝ ₉₀Th ²³⁴ + ₂α⁴
বিটা কণা নির্গমনের ফলে ভরসংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না । কিন্তূ পারমাণবিক সংখ্যা ১ একক বৃদ্ধি পায় ।
₉₀Th ²³⁴ ⟶ ₉₁Pa²³⁴ + β( ₋₁eº )
গামা রশ্মি নির্গমনের ফলে ভরসংখ্যা ও পারমানবিক সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না ।
₉₀Th²³⁰⇢ ₉₀Th²³⁰ + ₀γ⁰
নিউক্লিও শক্তি (Nuclear Energy):
ভরবিচ্যুতি বা ভর ত্রুটি ( Mass defect) : নিউক্লিয়াসের স্থির ভর(M ) নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রিনগুলির মোট ভরের থেকে কম হয় ।ভরের এই হ্রাস বা ত্রুটিকে ভরত্রুটি (Δm) বলে ।
ধরা যাক , কোনো মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা Z , ভরসংখ্যা A
∴ প্রোটন সংখ্যা = Z , নিউট্রন সংখ্যা = A - Z
যদি একটি প্রোটনের ভর mр এবং একটি নিউট্রনের ভর mη হয় তাহলে পারমাণুটির ভর = Z mр + (A - Z)mη ,পরমাণুটির প্রকৃত ভর ( পরীক্ষালন্ধ ভর ) M হলে
ভরবিচ্যুতি ( Δm) = [ Z mр + (A - Z) mη] - M
নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি ( Nuclear binding energy):
নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রনগুলির ভর হ্রাসের ফলে উদ্ভুত যে বিশেষ শক্তির দ্বারা নিউক্লিয়নগুলিকে একসঙ্গে ঠাসাঠাসি ভাবে আবদ্ধ রাখে তাকে নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি বলে । ভরহ্রাস Δm হলে বন্ধনশক্তি হবে
ΔE = Δm c² |
নিউক্লিয় বিভাজন (Nuclear fission) :
যে বিভাজনে কোনো ভারী নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়ে মোটামুটি দুটি কাছাকাছি ভরের নিউক্লিয়াস উৎপন্ন হয় এবং তারসঙ্গে কয়েকটি নিউট্রন কণিকা এবং প্রচুর পরিমানে শক্তি নির্গত হয় তাকে নিউক্লিয় বিভাজন বলে ।
₉₂U²³⁵ কে নিউট্রন কণিকা ( ₀n¹ ) দ্বারা আঘাত করলে প্রায় দুটি সম ভরের নিউক্লিয়াস ও তিনটি উচ্চ শক্তি সম্পন্ন নিউট্রন ও প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয় । নিচের সমীকরণের সাহায্যে দেখানো হল ।
₉₂U²³⁵ + ₀n¹ ⟶ ₉₂U²³⁶⟶ ₅₆Ba¹⁴¹ + ₃₆Kr⁹² + 3₀n¹ +শক্তি
এখানে শক্তির উৎস হল ভরত্রুটি(mass defect), উৎপন্ন নিউক্লিয়াস গুলির (₅₆Ba¹⁴¹ ,₃₆Kr⁹² ) ভর ও তিনটি নিউট্রনের ভরের সমষ্টি টার্গেট নিউক্লিয়াস (₉₂U²³⁵)ও আঘাতকারী কণা (নিউট্রন) এর মোট ভরের থেকে কম হয় ।এই ভর পার্থক্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
নিউক্লিও সংযোজন (Nuclear fusion) :
যখন অতি উচ্চ তাপমাত্রায় দুটি হালকা নিউক্লিয়াস একত্রে যুক্ত হয়ে একটি ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং প্রচুর পরিমান শক্তি উৎপন্ন করে সেই নিউক্লিও বিক্রিয়াকে নিউক্লিও সংযোজন বিক্রিয়া বলে । এখানে শক্তি নির্গমনের কারণ হল ভারী নিউক্লিয়াসটির ভর হালকা নিউক্লিয়াস দুটির মোট ভরের থেকে সামান্য কম হয় । এই ভর পার্থক্য আইনস্টাইনের E = m c² সমীকরণ অনুযায়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
ইহা নিউক্লিও বিভাজনের বিপরীত বিক্রিয়া । এই ধরনের বিক্রিয়া নক্ষত্রের অভ্যন্তরে ঘটে কারণ ইহা ঘটার জন্য অতি উচ্চ তাপমাত্রা আবশ্যক ।
চিত্রের নিউক্লিও সংযোজন বিক্রিয়াটি নিম্নলিখিত ভাবে লেখা যায় -
₁H³ + ₁H² ⟶ ₂He⁴ + ₀n¹ +শক্তি
নিউক্লিও বিভাজনের ব্যবহারিক প্রয়োগ :
এই নীতির সাহায্যে পরমাণু বোমা তৈরি করা যায় । বিভাজন বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত করে পরমাণু চুল্লি তৈরী করা হয় । এই পরমাণু চুল্লি থেকে বিদ্যুৎউৎপাদন করা যায় ।
তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার :
চিকিৎসা বিজ্ঞানে - ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলিকে নষ্ট করার কাজে তেজষ্ক্রিয় রেডিয়াম ,কোবল্ট ( ⁶ºCo) ব্যবহার হয় ।
পৃথিবীর বয়স নির্ণয় -কোনো স্থানে প্রাপ্ত ইউরেনিয়াম আকরিক থেকে সিসার আইসোটোপে পাওয়া যায় । ইউরেনিয়াম ও সিসার অনুপাত থেকে পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করা যায় ।
জীবাশ্মের বয়স নির্ণয় -কোনো জীবাশ্ম বা পুৰাতাত্বিক বস্তুর মধ্যে তেজস্ক্রিয় C¹⁴ ও C¹² অনুপাত নির্ণয় করে নমুনাটির বয়স নির্ণয় করা যায় ।
বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ) :মোবাইল ফোনে উত্তর দেওয়ার জন্য নীচের লিংক টি কপি করে গুগল ব্রাউজারে পেস্ট করে কুইজের পেজ টি ওপেন করতে হবে । লিংক টি হল :
https://forms.gle/RFTVhu3BHfASLRNz5
1. নীচের কোনটি α ,β,૪ রশ্মির আয়নন ক্ষমতার সঠিক ক্রম ?
A) α >β,>૪ B) α > ៵>β C) ૪ > β>α D) β > α >૪
2. কোন রশ্মির ভেদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি ?
A) ૪ B) α C) β D) আলো
3.তেজস্ক্রিয় পরমাণু থেকে β কণা নিঃসরণের ফলে উৎপন্ন পরমাণুর
A) ভর সংখ্যা বাড়ে B) পারমানবিক সংখ্যা বাড়ে C) ভর সংখ্যা কমে D) পারমানবিক সংখ্যা কমে
4.একটি তেজস্ক্রিয় মৌল হল
A) লেড B) রেডন C) আর্গন D ) বেরিয়াম
5.ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়
A) তেজস্ক্রিয় কোবাল্ট B) তেজস্ক্রিয় সোডিয়াম C) ইউরেনিয়াম D) পোলোনিয়াম
6. তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে নির্গত β রশ্মি হল
A) ইলেকট্রন স্রোত B) প্রোটন স্রোত C) নিউট্রন স্রোত D) তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ
7. কোনটি তেজস্ক্রিয় ?
A) C¹² B) C¹⁴ C) O¹⁶ D) Na²³
8. শুন্য স্থানে ៵ রশ্মির বেগ
A) 2 x 10⁸ m/s B) 3 x 10⁸ m/s C) 1.5 x 10⁸ m/s D) 2.5 x 10⁸ m/s
9.কোনো জীবাশ্মের বয়স নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়
A) Co⁶⁰ B) I¹³¹ C) P³² D) C¹⁴
10.সূর্যের শক্তির মূল উৎস হল
A) নিউক্লিও সংযোজন ও নিউক্লিও বিয়োজন B) নিউক্লিও বিভাজন C) নিউক্লিও সংযোজন D) কোনোটাই নয়
11. একটি ইলেকট্রনের ভর m হলে ,β কনার ভর
A) m B) 2m C) 3m D) 4m
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন